অনেককেই ইতস্তত করতে দেখা গেলেও তালেবানের ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবেই জানান দিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার তিনি ইসলামপন্থী এই মিলিশিয়া বাহিনীটিকে সরাসরি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তালেবানের ওপর যে কোনো নিষেধাজ্ঞায় তার সমর্থনের কথাও জানান দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
ট্রুডো বলেন, কানাডা অনেক আগেই এটি স্পষ্ট করেছে। তালেবানরা নিজেরা সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতা। তারা সন্ত্রাসীদের তালিকায় রয়েছে এটি তার কারণ। তাই এখন আমাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলা উচিত। মঙ্গলবার জি সেভেনভুক্ত দেশগুলো আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনায় বসছে।
ট্রুডো এই আলোচনায় তালেবানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা তুলবেন বলে জানিয়েছেন। আরেক সদস্য রাষ্ট্র বৃটেন জানিয়েছে, তারা তালেবানের আচরন বিচার করে দেখবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে কি হবে না।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে চরমপন্থী এই বাহিনীটি। ১৯৯৬ সাল থেকে ৫ বছর আফগানিস্তানে বর্বর শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছিল তালেবান। দেশটি হয়ে উঠেছিল জঙ্গি, জিহাদি ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০০১ সালে তালেবানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় আফগানিস্তানে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই ক্ষমতা ছেড়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল তালেবান। তবে দীর্ঘ ২০ বছর তারা আফগানিস্তানের গ্রামগুলোতে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে। অবশেষে এ বছরের মে মাস থেকে দেশটি ছাড়তে শুরু করে মার্কিন সেনারা। এই সুযোগে গ্রামগুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে তালেবান মিলিশিয়ারা। বিনাযুদ্ধে দখল করে নেয় একের পর এক শহর ও প্রাদেশিক রাজধানী। ধারণার চেয়েও কম সময়ে পতন ঘটে কাবুলের। ফলে দেশটির ক্ষমতায় এখন উগ্রবাদী এই গোষ্ঠীটিই। তারা জানিয়ে রেখেছে, আফগানিস্তান পরিচালিত হবে কট্টোর শরিয়া আইনের অধীনে। ফলে দেশটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সমগ্র বিশ্ব। দেশটির নাগরিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে। বিমানে করেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে অন্য দেশে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে কাজ করছে সরকারগুলো।
ট্রুডো জানান, কানাডা এখন যত বেশি সম্ভব আফগানকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার কানাডা সরকারের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, কাবুল বিমানবন্দরের অবস্থা এখনো অস্থিতিশীল এবং বিশৃঙ্খল হয়ে আছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ তালেবানের ভয়ে আশ্রয় নিয়েছে এবং দেশ ছাড়ার আশা করছে। উগ্র মিলিশিয়ারা কাবুল দখলের পর গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো বিমান চালু করেছে কানাডা। সর্বশেষ ফ্লাইটে ৪৩৬ জন কানাডীয় ও আফগানকে উদ্ধার করে দেশটি। কানাডা জানিয়েছে, তারা তালেবানের হাত থেকে বাঁচাতে ২০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেবে। নতুন এই প্রোগ্রামের অধীনে এখন পর্যন্ত ৯০০ আফগানি কানাডা পৌঁছেছে।