...
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

যা যা মিস করেছেন

গ্রাহকের টাকায় দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে ই-অরেঞ্জ। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ নিয়ে গোয়েন্দাদের তদন্তে পাহাড়সম নজিরবিহীন সম্পদের তথ্য উঠে আসে-যা দেখে রীতিমতো বিস্মিত গোয়েন্দারা। তাদের সম্পদের পরিমাণ দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে গেছে ভিনদেশ পর্যন্ত। জমি, প্লট, মদের বার, রিসোর্ট, ফ্ল্যাট, ডিজে ক্লাব, ডিলারশিপ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ- কী নেই প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, প্যারিস, ফিলিপাইন, নেপালে রয়েছে সুপারশপ, বার, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাসিনো। বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিবরণে চোখ কপালে উঠেছে অনুসন্ধানে নামা অনেক কর্মকর্তার।

জানা গেছে, ই-অরেঞ্জের মূল পরিকল্পনাকারী ডিএমপির একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পরিদর্শক পদমর্যাদার। ওই কর্মকর্তার এক স্ত্রী কোরিয়ান ক্লাবের সাবেক ওয়েটার নাজনিন নাহার বীথি হলেন এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হলেন তার আপন বোন সোনিয়া মেহজাবিন জুঁই এবং তার স্বামী বিকাশের ডিজিএম মাসুকুর রহমান সুমন প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা। চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে আছেন আমানউল্লাহ। যার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে আগেও মামলা হয়েছিল বেশকটি। এদের প্রত্যেকের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণা করে গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর গোয়েন্দারা তদন্ত করতে যেয়ে ভয়ংকর সব তথ্য খুঁজে পান। গোয়েন্দা সংস্থাটি এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মকর্তাদের আমলনামা তৈরি করেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের একটি  কপি এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছেও। টাকা আত্মসাতের মামলায় ইতিমধ্যে ই-অরেঞ্জের মালিকসহ তিনজন রয়েছেন কারাগারে। গতকাল সোনিয়া মেহজাবিন জুঁই ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান এবং চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

 

গোয়েন্দা সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানা অপরাধ ও সম্পদের বিবরণ। ই-অরেঞ্জের মাস্টারমাইন্ড সেই কর্মকর্তার সম্পদের বিবরণ দেখে অনেক কর্মকর্তার চোখ কপালে উঠেছে। বর্তমানে তার আবাসস্থল শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালি টাওয়ার-৩, ফ্ল্যাট-১০, বি-১। এখন পর্যন্ত কাগজ-কলমে তার তিন স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথম স্ত্রী মোমেনা মাসুম। এই সংসারে সামিরা সুবহা নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে। ইস্পাহানি গ্রুপে কর্মরত মোমেনা মাসুমের সঙ্গে ১০ বছর ধরে কোনো সম্পর্ক নেই তার। একজন অভিনেত্রীর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওই অভিনেত্রী থাকেন আফতাবনগরে। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ডল পিউ। অরেঞ্জ বাংলাদেশের মালিক ছিলেন তিনি। ডল পিউর সঙ্গে লন্ডনে পড়তে গিয়ে পরিচয় হয় তার। অরেঞ্জ নামের এই কোম্পানি প্রথমে লন্ডনে ছিল। পরবর্তীতে তিনি মারা যাওয়ায় পর অরেঞ্জ বাংলাদেশের মালিক হন ওই কর্মকর্তার দ্বিতীয় বোন সোনিয়া মেহজাবিন জুঁই। তার তৃতীয় স্ত্রীর নাম নাজনিন নাহার বীথি। বীথি এক সময় কোরিয়ান ক্লাবের ওয়েটার ছিলেন। ওই কর্মকর্তা দেশের অভিজাত আমেরিকান ক্লাব, জার্মান ক্লাব এবং কোরিয়ান ক্লাবেরও মেম্বার।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার ছোট বোন সোনিয়া মেহজাবিন জুঁই। ই-অরেঞ্জের প্রধান নির্বাহী। তার সব ব্যবসাই তদারকি করেন সোনিয়া। সোনিয়ার স্বামী মাসুকুর রহমান সুমন বেসরকারি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান বিকাশের ডিজিএম। ই-অরেঞ্জের প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিচালক।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওই কর্মকর্তার রাজধানীর শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালি টাওয়ার-৩- রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট। এর বাইরে নিকেতনে রয়েছে তার আরও দুটি ফ্ল্যাট। নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তার ছোট খালু সাগর। বিটিআই ল্যান্ডমার্কের পঞ্চম ফ্লোরের সামনের দিকের বাম পাশে কমার্শিয়াল অফিস স্পেস।

টিঅ্যান্ডজি নামের প্রতিষ্ঠানের দুটি ব্রাঞ্চ। একটি উত্তরা ১৩নং সেক্টর। গরিবে নেওয়াজ এভিনিউতে। অন্যটি গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। পূর্বাচল ৩নং সেক্টরের ১৭নং প্লট। একটি অভিজাত এলাকায় রয়েছে প্লট এবং ফ্ল্যাট। খাগড়াছড়িতে রিসোর্টের জন্য জায়গা কিনেছেন। নিজ জেলায় রয়েছে প্রায় ৫০০ বিঘার ওপরে জমি এবং গুলশানে বিভিন্ন পণ্যের ডিলারশিপ নিয়েছেন তিনি।

থাইল্যান্ডের পাতায়ায় জমি, ফ্ল্যাট, সুপারশপ রয়েছে। হিলটন হোটেলের পাশে ফাইভ স্টার হোটেল করার জন্য মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করেছেন তিনি। পর্তুগালের লিজবনে সুপারশপ, বার ও রেস্টুরেন্টে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছেন। প্যারিসে রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং বার। ফিলিপাইনে ম্যানিলা পি বরগুজ স্ট্রিট-এ বার। নেপালের কাঠমান্ডুর থামিলে ছোট বার এবং ক্যাসিনো রয়েছে। এসব ব্যবসায় তিনি কয়েক শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।

এ বিষয়ে গত রাতে ওই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তিনজন রিমান্ডে : টাকা আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানসহ তিনজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া রিমান্ডের এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামি হলেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ।

এ বিষয়ে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গত ১৯ অগাস্ট ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। ওই দিন বিচারক রিমান্ড শুনানির জন্য ২৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন। গতকাল রিমান্ড শুনানিতে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের পক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন আবেদন করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের পাঁচ মালিক-পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলায় সোনিয়া, মাসুকুর ও আমানউল্লাহ ছাড়াও বীথী আকতার, কাওসারসহ ই-অরেঞ্জের সব মালিককে আসামি করা হয়েছে। তবে ওই কোম্পানির মালিকানায় কতজন রয়েছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া ১৮ আগস্ট রাতে গুলশান এলাকা থেকে আমানউল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আসামিরা পণ্য সরবরাহ না করে ১ লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্য বুঝে না পাওয়ায় এর আগে ১৬ আগস্ট দিনভর ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা।

এদিকে পাওনা আদায়ের দাবিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার শতাধিক গ্রাহক ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত চত্বরে মানববন্ধন ও  বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সকাল থেকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা আদালত চত্বরে প্লাকার্ড-ব্যানার হাতে নিয়ে বিভিন্ন দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে তারা বলেন, আমাদের টাকা ই-অরেঞ্জকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আদালত চত্বরে সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে শতাধিক গ্রাহক মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। শুনানির সময় তারা আদালতের এজলাসের সামনে অবস্থান নেন। শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের নিচে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও প্লাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের শান্ত থাকতে বলেন।

খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের। 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.