মোঃরোমান বেপারী, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী মুন্সীর ছেলে। যেখানে আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল সেখানেই লিটন মুন্সীর ছিলো সরব উপস্থিতি। তিনি ছিলেন দলের নিবেদিত কর্মী।
এই টানেই লিটন সেদিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিলে। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। লিটনের পরিবারে শোকের ছায়া এখনও কাটেনি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
তবে গত ৩ বছর ধরে কেউ খবর নেয়নি তার বাবা-মায়ের। এখন রোগে-শোকে অসহায় জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। পুরোনো ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। সহায় সম্বল জমি-জমা কিছুই নেই তাদের।
বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার কেমন আছে তা জানতে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সীর বাড়ি গেলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। ১৭ বছর পার হলেও লিটনের বাবা- মায়ের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি।
লিটনের স্ত্রী মাফিয়া বেগম লিটন মারা যাওয়ার ৩ বছর পর প্রবাসী এক যুবককে বিয়ে করে শশুর বাড়ি থাকেন। সরকারী সুযোগ-সুবিধা পেয়ে একমাত্র মেয়ে মিথিলা মোটামুটি আছে। ভালো নেই মাফিয়ার শ্বশুর-শ্বশুড়ী (লিটনের মা-বাবা)।
নিহত লিটনের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবা বলেছিল পুরনো ঘর মেরামত করার দরকার নাই। আমি বিল্ডিং দিব। কিন্তু সেটা আর হয়নি। পুরনো ঘরেই থাকি। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোভাবে থাকতে পারব। আমরা দুজনেই অসুস্থ। প্রতিমাসে আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এসব টাকা পাব কোথায়?’ তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে লিটনের মেয়ে মিথিলার নামে ঢাকায় একটি ফ্লাট বাড়ী এবং ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিমাসে তার খরচ বাবদ ৫ হাজার করে টাকা দেন। মিথিলা মাদারীপুর থাকে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ফোন করে।
লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী বলেন, ‘আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? সরকারীভাবে ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। চিকিৎসা করতে সে টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আমি মাসে ৩ হাজার টাকা করে সরকারী ভাতা পাই। এতে আমাদের সংসার চলেনা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি জানান।
নিহত লিটন মুন্সীর একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যখন আমার বাবা মারা যান তখন আমি খুবই ছোট। বাবা কি জিনিস তা বুঝতে পারিনি। বাবার আদর পাওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছি। হামলার ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হলেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’
মিথিলার মা মাফিয়া বেগম জানান, মিথিলা এখন মাদারীপুর ডনোভান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে পড়ে। যোগ্য হলে তার একটি চাকুরীর ব্যবস্থাসহ গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তির রায় কার্যকর করার দাবী জানাই।