বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

মধ্য ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের গুরুত্বারোপ

যা যা মিস করেছেন

উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া : আঞ্চলিক যোগাযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের শেষ দিনে আজ শুক্রবার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সহযোগিতার প্রসারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসাথে বিশ্ব মহামারি পরিস্থিতি ও ভ্যাকসিন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী। এছাড়াও তিনি সাইড লাইনে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেন।

তাসখন্দের কংগ্রেস হলে আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে এবং বিমসটেক নামক সংস্থার মাধ্যমে শীর্ষ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। তিনি জানান, আশিয়ান এবং বিমসটেকের সাথে যুক্ত দেশগুলো সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন সংযোগ প্রকল্পে নিজেদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে একটি মাইলফলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

মধ্য ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভালো যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা নতুন পথ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হতে পারে মন্তব্য করে ড. মোমেন আরও বলেন, শিক্ষা, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে এ দুই অঞ্চলের জনগণের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আকাশপথ ও স্থলপথ ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। একইসাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার সুযোগ, দ্বিগুণ কর পরিহার, ভিসা সহায়তা এবং অন্যান্য বাণিজ্য অনুকূল ব্যবস্থা সহজতর ও ত্বরান্বিত করতে দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

 

বক্তব্যে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের নানা কার্যক্রমের কথাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ় ভূমিকা অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া মহামারিকালে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার ও ভ্যাকসিনের সমতায় গুরুত্ব দেন মন্ত্রী। উজবেকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, এখন সারাবিশ্ব একযোগে মহামারি করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ঠিক এই এসময় এরকম একটি সম্মেলন আঞ্চলিক সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি সাভকাত মিরজিয়য়েভ ছাড়া বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সাইড লাইনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক : সম্মেলন চলাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেন। ভারত, চীন ও তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং উভয় দেশের কোভিড পরিস্থিতি ও টিকাদান প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারেও আলোচনা করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকার কার্যক্রম আবারও চালু হওয়ায় বৈঠকে আনন্দ প্রকাশ করেন ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় উভয় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর যৌথ উদ্যোগে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরুর বিষয়েও বৈঠকে গুরুত্বারোপ করা হয়।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে বৈঠক করেন ড. মোমেন। বৈঠককালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ভিডিওবার্তা পাঠানোয় ড. মোমেন ধন্যবাদ জানান। একইভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিওবার্তা বিনিময় করায় ড. মোমেনকে ধন্যবাদ জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কোভিড পরিস্থিতিতে পরামর্শ প্রদান এবং উপহার হিসেবে ভ্যাকসিন প্রদান করায় বৈঠকে চীন সরকারকেও ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একইসাথে বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহের পথ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা এবং যৌথ উদ্যোগে করোনার টিকা উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য চীন সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ে এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে আরও কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন।

তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরোজিদ্দিন মুহরিদ্দিনের সাথে বৈঠককালে ড. মোমেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহরিদ্দিন নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তাদের প্রত্যাবাসনের বহুমাত্রিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security