শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

স্বপ্ন জয়ের আশা: ৩৪ বছর বয়সে জাতিসংঘের মহাসচিব প্রার্থী

যা যা মিস করেছেন

৩৪ বছর বয়সী যুবতী আকাঙ্খা অরোরা। চোখেমুখে তার স্বপ্ন। বিশ্বের নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে এক বিপ্লব সৃষ্টি করতে চান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে রচনা করতে চান এক ইতিহাস। এত অল্প বয়সী এই যুবতী জাতিসংঘের মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যদি তাতে তিনি সফল হন তাহলে বিশ্ববাসীর আশ্রয়স্থল জাতিসংঘের প্রথম কোন নারী মহাসচিব হবেন তিনি। আগামী অক্টোবরে এই পদে নির্বাচন।
তাতে আগেভাগেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই যুবতী।
একবার তিনি মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। তখন ইমার্জেন্সি রুমে জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তখনই বুঝতে পেরেছেন জীবন কি। অরোরা বলেছেন, আমার সৌভাগ্য যে ওই দুর্ঘটনায় শরীরের ভিতরের কোনো অঙ্গের কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু পা ভেঙে গিয়েছিল। বিভিন্ন স্থান থেঁতলে গিয়েছিল একটি ট্যাক্সি দুর্ঘটনায়। তবু ওই দুর্ঘটনাটি ছিল মারাত্মক। এটাই আমার জীবনে বড় নাটকীয় পরিবর্তন এনে দেয়। নিশ্চয়ই ঈশ্বর আমাকে কোনো কারণে রক্ষা করেছেন। নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করলাম: বিশ্বের জন্য আমি কি করেছি? আল জাজিরার কাছে তিনি বলেছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি ভিন্নভাবে উপলব্ধি করা শুরু করেন।

২০১৬ সালে তিনি যোগ দেন জাতিসংঘে। এর দু’বছরের মধ্যে তার মনে হতে থাকে যে উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে এই সংগঠন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে যাওয়া ছাড়া এটার উন্নত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই ৩৪ বছর বয়সে এসে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরবর্তী মহাসচিব পদে প্রার্থী হবেন। যদি তাই হয় এবং তিনি এই যাত্রায় সফল হন তাহলে একসঙ্গে দুটি রেকর্ড গড়বেন। একটি হলো সবচেয়ে কম বয়সে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং অন্যটি হলো প্রথম কোনো নারী মহাসচিব।
আকাঙ্খা অরোরা বলেন, জাতিসংঘ মানুষকে হতাশ করেছে। যাদেরকে তার সেবা দেয়ার কথা ছিল তারা তা দেয়নি। জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সেবা দেয়ায় তার নিজস্ব অক্ষমতা। সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোন সমস্যা নয়। সমস্যা হলো তা বাস্তবায়ন, যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর ফলে জাতিসংঘের প্রতি যে প্রত্যাশা, আস্থা, এর সৃষ্টিশীলতা সেসব হারিয়ে যাচ্ছে।

কূটনীতিক হিসেবে অভিজ্ঞতা
বর্তমানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁর বয়স ৭১ বছর। তিনি একজন ঝানু কূটনীতিক। তার তুলনায় আকাঙ্খা অরোরার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক কম। বয়সে তার প্রায় অর্ধেক। এ পদে অন্য যেসব প্রার্থী আসবেন তাদের তুলনায়ও হয়তো অরোরার অভিজ্ঞতা কম হবে। তবু তিনি এত উচ্চ পদে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন অভিজ্ঞতায় ঘাটতির বিষয়। তিনি মনে করেন, কূটনীতি কনফারেন্স রুমে বসে এবং শুধু রাজনৈতিক মিটিং থেকেই শিখা যায় না এবং পরিচালনা করা যায় না।
আকাঙ্খা অরোরার জন্ম ভারতে। তার মা একজন গাইনী ডাক্তার। তার সঙ্গে ৬ বছর বয়সে অরোরাকে সৌদি আরব চলে যেতে হয়েছিল। সেখানে তার মা চাকরি নিয়েছিলেন। সেখানে সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একমাত্র আমেরিকান স্কুলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার পিতামাতা। ফলে অরোরাকে তিন বছর পরে আবার ভারতের একটি বোর্ডিং স্কুলে ফিরে আসতে হয়। আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য কানাডার টরোন্টোতে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তি পান ১৮ বছর বয়সী আকাঙ্খা অরোরা। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। ২০১৬ সালে জাতিসংঘে কাজ করার জন্য চলে যান নিউ ইয়র্কে। তিনি বলেন, আমার মতে বিভিন্ন দেশে এবং সংস্কৃতিতে বসবাস করা মানুষদের বোঝা এবং তাদেরকে সম্মান করাটাই হলো কূটনীতি। দিনের শেষে তো সব কিছু এসে এখানেই দাঁড়াচ্ছে যে- সব কাজই হলো মানুষের সেবা করা। প্রতিটি মানুষের জন্য সম্মান করা। এটাই তো কূটনীতি।
আগামী অক্টোবরে মহাসচিব পদে নির্বাচন। অরোরা আশা করেন এই নির্বাচনে এই সংগঠন তাকে নতুন একটি ধ্যান, ধারণার প্রয়োগ ঘটাতে সমর্থন দেবে। বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে তার অগ্রাধিকারে থাকবে শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলা। তিনি মনে করেন এসব শরণার্থীর কাছে জাতিসংঘ হবে একজন অভিভাবক। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন ইউএনএইচসিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তার দেশের ভিতরেই বাস্তুচ্যুত। প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ শরণার্থীর বয়স ১৮ বছরের নিচে। আকাঙ্খা অরোরা মনে করেন, এসব শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে আলোচনায় অগ্রাধিকার দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে জাতিসংঘের। এসব মানুষকে তার দেশের ভিতরে আশ্রয় শিবিরে দশকের পর দশক বসবাস করতে দিতে পারি না আমরা। এ ছাড়া আকাঙ্খা অরোরার অগ্রাধিকারে রয়েছে জলবায়ু, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা। তিনি মনে করেন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রচুর কাজ করতে বাকি এখনও।
এ যাবত জাতিসংঘের মহাসচিব পদে কোনো নারীকে নির্বাচিত করা হয়নি। ৫ বছর আগে গত নির্বাচনে মোট মনোনয়ন পেয়েছিলেন ১৩ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ৭ জন ছিলেন নারী। বর্তমান উপমহাসচিব নাইজেরিয়ার আমিনা মোহাম্মদ। আকাঙ্খা অরোরা মনে করেন বিশ্বকে এখন দেখানো উপযুক্ত সময় এসেছে যে নারীরাও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। তার মতে, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু আমার সক্ষমতার পরীক্ষা নয়। এই প্রার্থিতা জাতিসংঘের সক্ষমতার প্রশ্নও। জাতিসংঘ কি লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাস করে, নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে নাকি এসবই তাদের ফাঁকা বুলি? এটা দেখার সময় এখন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি অন্যদের যা বলেন তা করে দেখানো। অরোরা বলেন, নারীর জন্য সমতা প্রদর্শন একটি কঠিন লড়াই।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security