করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আজ (সোমবার) থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে সাত দিনের লকডাউন। আক্ষরিকভাবে লকডাউন বলা না হলেও সব ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যাত্রীবাহী গণপরিবহন। পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁয় দেওয়া হয়েছে বিধিনিষেধ। তবে সংবাদপত্রসহ সব ধরনের জরুরি সেবা থাকবে বিধিনিষেধের বাইরে।
আজ ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করে এসব নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
রবিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী/বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। সব সরকারি/আধা-সরকারি/ স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চালু থাকবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শিল্পকারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁয় কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থায় হোটেল- রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে মার্কেটে যেতে পারবেন না। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকার সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্যাংক লেনদেন ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত: আজ সোমবার থেকে আগামী ৭ দিনের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালুর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। তবে লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলো জরুরি ব্যাংকিং সেবা প্রদান অব্যাহত বা নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবলের বিন্যাস উপস্থিতির বিষয়টি ব্যাংক নিজ বিবেচনায় সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে শাখার নিকটবর্তী স্থানে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ব্যাংকের প্রায় সব ধরনের সেবাই চালু থাকবে। পাশাপাশি এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের সন্ধ্যাকালীন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটিকালীন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
শেয়ারবাজার খোলা থাকবে: শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ করলে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হবে না। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে আছি, কাজেই আশা করি মানুষ ঘরে বসে হলেও ডিজিটালে কাজ করতে পারবে, টেলিফোনে কাজ করতে পারবে, মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কাজ করতে পারবে। তবে ব্যাংকিং আওয়ারের সঙ্গে শেয়ারবাজারে টাইমও কমে আসবে।
বইমেলা ১২টা থেকে ৫টা: অমর একুশে বইমেলার সময় কমিয়ে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত করার কথা জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সরকার কর্তৃক লকডাউন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সময়সূচি অব্যাহত থাকবে। আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণের দিন পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।