বুধবার, এপ্রিল ১০, ২০২৪

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ভাস্কর্য বিভিন্ন দেশের  সংস্কৃতির গৌরব বহন করে চলছে  

যা যা মিস করেছেন

 

দ্যা মেইল বিডির সিনিয়র রিপোর্টার হকের বিভিন্ন দেশের  ভাস্কর্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন:

সারা বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ভাস্কর্য থাকলেও সম্পতি বাংলাদেশের একটি গোষ্টি ভাস্কর্য নিয়ে নানা ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমান দের মনে বিদ্বেষের সৃষ্টি করছে। ভাস্কর্যশিল্প একটি দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নানা সময়ে আবিষ্কৃত নানা ভাস্কর্য থেকে বোঝা যায়, সুদূর অতীতকাল থেকেই পৃথিবীতে ভাস্কর্যশিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভাস্কর্য পৃথিবীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরব বহন করে চলেছে।

আজও দেশে দেশে ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে নিপুণ সৃষ্টিশীলতায়। এর মাধ্যমে ফুটে উঠছে নিজ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এ থেকে মুসলিম বিশ্বও পৃথক নয়। খোদ সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইরান, ইরাকসহ প্রায় সকল মুসলিম দেশেই রয়েছে ভাস্কর্য।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়া মুসলিমের সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বে প্রথম। বিশ্বের মোট ইসলাম ধর্মাবলম্বীর শতকরা ১২.৯ ভাগ বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। সংখ্যার বিচারে এর পরই রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রায় ৫০০০ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এ দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ হাজার দ্বীপে মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। সুমাত্রা, জাভা, সুলাওয়েসি, বোর্নিও ও নিউ গিনি পাঁচটি প্রধান দ্বীপ। চিত্রের ভাস্কর্যটি বালির ডেনপাসার এলাকার মূল সড়কে অবস্থিত

 

পাকিস্তান

ইন্দোনেশিয়ার পর বেশি মুসলিম বসবাসকারী দেশ পাকিস্তান। দেশটির জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহত রয়েছে ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রযাত্রা। সেখানে রয়েছে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য।

ইরান

ইরানে রয়েছে কবি ফেরদৌসী, ওমর খৈয়াম, পারস্যের নেপোলিয়ন বলে খ্যাত নাদির শাহর মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য। এমনকি ইরানের রাজধানী তেহরানে দু’বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় সমকালীন ভাস্কর্য প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা।

ইরাক

ইরাকেও আছে অনেক ভাস্কর্য। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনেই আব্বাস ইবনে ফিরনাসের ভাস্কর্যটি নজর কাড়ে সবার। বাগদাদের পাশে আল-মনসুর শহরেও রয়েছে মনসুরের একটি বিশাল ভাস্কর্য। আছে অনেক সাধারণ সৈনিকের ভাস্কর্যও।

 

মালয়েশিয়া

আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে মালয়েশিয়ার সাফল্য চোখধাঁধানো। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং পুত্রাজায়া হলো ফেডারেল সরকারের রাজধানী। মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার অবস্থান মুসলিম বিশ্বে ১৩তম। দুই কোটি ৮০ লাখের অধিক জনসংখ্যার দেশটির ৬০.৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো ওয়াশিংটন মনুমেন্টের আদলে গড়া ন্যাশনাল মনুমেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে ১৫ মিটারের এই ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হয় ১৬৬৩ সালে। প্রতীকীভাবে সাতজন বীরের প্রতিমূর্তির মাধ্যমে বিশ্বস্ততা, আত্মত্যাগ আর বন্ধুত্বের বিষয়টি এই ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার ভাস্কর্য শিল্প সনাতন ও আধুনিক ধারার এক স্বতন্ত্র মেলবন্ধন।

 

                                                                                       তুরস্ক

আরেক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কেও রয়েছে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের অগণিত ভাস্কর্য। একেকটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যে একেক রকমভাবে আতাতুর্ক এবং তুরস্কের ইতিহাস, ঐতিহ্য বিবৃত করা হয়েছে। এ ছাড়াও সেখানে রয়েছে অনেক উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।

আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো, বুর্জ আল খলিফার বিপরীতে স্থাপিত আরবীয় যুগলের মূর্তি, দুবাইয়ের ওয়াফি অঞ্চলের প্রবেশপথে পাহারাদারের প্রতীক হিসেবে কুকুরের ভাস্কর্য ও ইবনে বতুতা মার্কেটে স্থাপিত ভাস্কর্য।

দুবাই

ইসলামের পুণ্যভূমি বলা হয় সৌদি আরবকে। প্রচন্ড-রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবের বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দায় রয়েছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। রাজধানী জেদ্দার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে আরও রয়েছে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য।

সৌদি আরব

সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কাতারেও দেখা যায় ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন সব ভাস্কর্য।

কাতার

 

 

মিশর

তাজিকিস্থানের রাজধানী দুশানবেতে রয়েছে ইবনে সিনার একটি বিশাল ভাস্কর্য। মিশরেও রয়েছে অংসখ্য ভাস্কর্য। শুধু ইসলাম-পর্বই নয়, খ্রিস্টপূর্ব আড়াই হাজার অব্দের এসব মূর্তিও মিসরের মুসলমানরা ধ্বংস করেনি। বিশ্বের এমন অসংখ্য মুসলিম দেশে বিভিন্ন ভাস্কর্য থাকলেও সেসব দেশে সেগুলো নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।

আবুধাবী

 

তবে সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ ‘নিষেধ’ দাবি করে এক সমাবেশে তা বন্ধের দাবি তোলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। মামুনুলের বক্তব্যকে সমর্থন করে একই দাবী জানাচ্ছেন আরও কিছু ইসলামি সংগঠনের নেতারা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ

এমন দাবি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। তারা বলেছেন, ভাস্কর্য নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের সংস্কৃতির প্রতি চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাস্কর্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই অংশ। কারো বিরোধিতায় এসব ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security