বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

মোবাইল ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হওয়ার কারণ

যা যা মিস করেছেন

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে৷ তাই প্রশ্ন, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি কেন বিস্ফোরিত হয়? আর কীভাবে তা এড়ানো যায়?

আজকাল ইন্টারনেট খুললেই মোবাইল বা স্মার্টফোনের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যাওয়া কিংবা ফোন বিস্ফোরণের মত ঘটনাগুলো চোখে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনায় ব্যবহারকারী আহত বা মৃত্যু হওয়ার মত দুঃখজনক ঘটনাও দেখা যায়।

বিশ্বের নামীদামী ফোন নির্মাতা যেমন; অ্যাপল ও স্যামসাং এর তৈরি ফোনও বিস্ফোরিত হওয়ার রেকর্ড আছে। স্যামসাং তো ২০১৬ সালে তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোন গ্যালাক্সি নোট সেভেন বিস্ফোরণের ঘটনায় পুরো মডেলটিই মার্কেট থেকে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো। তাই এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবারও সময় এসেছে।

স্মার্টফোনের সব অংশ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী নয়। মূলত এর ব্যাটারিটিই বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনা বেশি চোখে পড়ে। বাকী যন্ত্রাংশ আসলে বিস্ফোরিত হওয়ার মত তেমন কিছু দিয়ে তৈরি নয়। ফোনে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন বা লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি, এবং এই ব্যাটারিগুলো স্ট্রেস নেয়ার উপযোগী করেই বানানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও দুটি কারণে এসব ব্যাটারিও কখনো কখনো বিস্ফোরিত হতে পারে। প্রথমটি হলো পাঙ্কচার বা লিকেজ। হাত থেকে পড়ে, অত্যাধিক চাপে, কিংবা আঘাত লেগে আপনার ব্যাটারির সেলগুলো পাঙ্কচার হয়ে এদের মাঝে শর্ট সার্কিট হয়ে ব্যাটারিতে আগুন ধরতে পারে।

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে কেন বিস্ফোরণ ঘটে এটা জানতে হলে আগে জানতে হবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি গঠন সম্পর্কে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির দুটি ইলেক্ট্রোড থাকে- একটি ধনাত্মক আয়নের ক্যাথোড, অন্যটি ঋণাত্মক আয়নের অ্যানোড। দুটি অংশকে আলাদা করে রাখে খুবই পাতলা একটি প্লাস্টিক পর্দা। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি যখন চার্জ দেওয়া হয়, তখন ক্যাথোড থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বা লিথিয়াম আয়নগুলো বল প্রয়োগের কারণে অ্যানোডের অংশে ধাবিত হয়।

একইভাবে ব্যাটারির চার্জ যখন খরচ হতে থাকে বা কমতে থাকে, তখন একেবারে উল্টা ঘটনা ঘটে। লিথিয়াম আয়ন তখন অ্যানোড থেকে ক্যাথোডের দিকে ছুটতে থাকে।

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি এতো কাজের, সেই একই কারণেই কিন্তু এ ধরনের ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ ঘটে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে অতুলনীয়। সঞ্চিত বিদ্যুৎ যখন ধীরে ধীরে খরচ হয়, তখন ব্যাটারিটি নিরাপদ। কিন্তু লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি যদি একবারেই এর সঞ্চিত সমস্ত বিদ্যুৎশক্তি ছেড়ে দিতে চায়, তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

যখন ব্যাটারির ভেতরে অ্যানোড এবং ক্যাথোডকে আলাদা করে রাখা পাতলা পর্দা কাজ না করায় কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অ্যানোড এবং ক্যাথোড পরস্পর যুক্ত হয়ে যায়, তখন ব্যাটারি গরম হতে থাকে। এর ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে ব্যাটারিতে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটে।

আরো যেসব কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে সে সম্পর্কে একটু ধারণা নেই-

ডিজাইন ও উৎপাদনজনিত সমস্যাঃ

ব্যাটারি ডিজাইনে যদি গণ্ডগোল থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাটারির দুটি ইলেক্ট্রোড এবং পৃথক করে রাখা পর্দার মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ সমস্যা হতে পারে। চার্জ দেওয়ার পর ব্যাটারির ইলেক্ট্রোড কিছুটা বাঁকানোর ফলে শর্ট সার্কিট হয়েও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

বাহ্যিক প্রভাবঃ

বাইরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলেও ব্যাটারি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যাটারি বা ফোন বারবার হাত থেকে ফেললে বা ব্যাটারিতে বাইরের কোনো আঘাতের কারণেও মধ্যবর্তী সেপারেটর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চার্জারে সমস্যাঃ

চার্জারে ত্রুটির কারণেও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে বাড়তি চার্জ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। তবে কোনো কারণে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে বাড়তি চার্জের কারণে ব্যাটারি গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এজন্য চার্জ দেওয়া সম্পন্ন হলে ফোন চার্জার থেকে খুলে ফেলতে হবে। এছাড়া ফোনের অরিজিনাল চার্জার ছাড়া নিম্নমানের চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

তবে অল্প কিছু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি খুবই সময়োপযোগী এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাটারি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security