ছবি ঘরজানা- অজানাসারা বাংলা
পুঠিয়াতে রয়েছে ১৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
প্রাকৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য্যে লীলাভূমি

প্রাকৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য্যে লীলাভূমি হলো পুঠিয়া। ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে বেশ কয়েকটি রাজা বাদশাদের আবাসস্থল হিসাবে দীর্ঘদিন থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মাঝে পুঠিয়ার খ্যাতি আছে। এখানে একই স্থানে ছোটবড় ১৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।
রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকাণ্ডরাজশাহী মহাসড়কের পার্শ্বে স্থলে, ঐতিহ্যবাহী এই উপজেলাটি। প্রাচীন জনপদের অংশ হিসাবে পুঠিয়ার জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। উপজেলাটি হাজার বছরের ইতিহাসের গতিধারা নির্ণয়কারী অসংখ্য নিদর্শন সমৃদ্ধ। আকর্ষণীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি আয়তাকার দ্বিতল রাজবাড়ী, সুনিপুন টেরাকোটা সম্বলিত ছোট-বড় প্রায় ১৫টি ঐতিহাসিক মন্দির ও তার ইতিহাস ঐতিহ্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নজর কাড়ে।
প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীটির জন্যই পুঠিয়া উপজেলা বিখ্যাত। তাই এখানকার রাজবাড়ীকে ঘিরে‘পুঠিয়া রাজবাড়ী সংলগ্ন শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ ও রানী সরোবর (হাওয়াখানা) এর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প ’নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওলিউজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হকের সার্বিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা মোতাবেক পুঠিয়া রাজবাড়ীর পাশে অবস্থিত গোবিন্দ সাগর সংলগ্ন আমবাগানে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ, রেস্ট হাউজ, গোবিন্দ সাগর ও শিব সাগর পুকুরের পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন, রাণী সরোবরের (হাওয়াখানা) পাশে দুটি ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর পাড় বাঁধাইসহ সৌন্দর্যবর্ধনের ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে, পুঠিয়া রাজবাড়ী সংলগ্ন শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ ও রানী সরোবর (হাওয়াখানা) এর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প। যা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হলে পুঠিয়া রাজবাড়ীর সৌন্দর্য, অতীত ইতিহাস পর্যটকদেরকে আরও আকৃষ্ট করবে। আগত পর্যটক, শিশু-কিশোরদের জন্য প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটন সুযোগ-সুবিধা এবং বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এর ফলে পুঠিয়া রাজবাড়ী ও এর পাশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বহুগুণে বাড়বে।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর পার্শবর্তী এলাকার সৌন্দর্য ও পর্যটক সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগত পর্যটক, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও দর্শনার্থীদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে। ইউএনও ওলিউজ্জামান জানান, পুঠিয়া পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত হলেও রাজবাড়ীকে ঘিরে ইতোপূর্বে পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির কোনও কার্যক্রম নেয়া হয়নি। আগত পর্যটক, শিশু-কিশোরদের জন্য বিশ্রামের বা অবকাশ যাপনের জন্য কোনও রেস্ট হাউস ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ফলপ্রশ্রিুতে পর্যটকদের পক্ষে সব ঐতিহাসিক নিদর্শন উপভোগ করা কিংবা প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজবাড়ী ভ্রমণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের চিত্ত বিনোদনের জন্য কোনোও পরিবেশও নেই। ফলে পর্যটক আকর্ষণ করার মতো অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ অন্যান্য দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পুঠিয়া রাজবাড়ী পরিদর্শনকালীন বিশ্রাম বা রাত্রীযাপনের প্রয়োজন হলে কোনো রেস্ট হাউস না থাকায় এই সুযোগ-সুবিধা দেয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রাজশাহীর বিখ্যাত জনহিতৈষী পুঠিয়া রাজ পরিবারের হিন্দু জমিদার রাজাদের দ্বারা পুঠিয়া রাজবাড়ীর মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পুঠিয়ার জমিদার বা রাজারা প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এবং ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্নের জন্য বিভিন্ন স্থাপত্য কাঠামো ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্দির নির্মাণ করেন, যা আজও কালের সাক্ষী হিসাবে টিকে আছে। পুঠিয়ায় অবস্থিত অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির ফলক স্থাপিত আছে। এখানকার পুরাকীতিগুলো হলো, পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী ও ১৩টি মন্দির রয়েছে। পুঠিয়ার প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে ১৪টি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ ও পুঠিয়া উপজেলার ঐতিহ্য সারাবিশ্বের জনগণের কাছে ছড়িয়ে দিতে পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসন একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।