শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

বুড়িগঙ্গায় এখন প্রাণস্পন্দনের ঢেউ

যা যা মিস করেছেন

যে নদীর নাম শুনলে দুর্গন্ধযুক্ত কুচকুচে কালো পানির কুশ্রী চোখে ভেসে উঠত, কিছুটা বদল এসেছে সেই বুড়িগঙ্গার পানিপ্রবাহে। আগের সেই ময়লা-দুর্গন্ধময় পানি ঝেড়ে ফেলে নীলাভ জলের প্রাণস্পন্দন বুড়িগঙ্গার বুকে। যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বুড়িগঙ্গা থেকে, তারা ফিরে আসছে নদীর তীরে। নৌকা নিয়ে ভাসছে নদীর বুকে।

এককালে এই নদী স্বচ্ছতোয়া ছিল, যার তীরে গোড়াপত্তন হয় রাজধানী ঢাকার। গড়ে ওঠে নগরায়ণ। কিন্তু স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গা কালে কালে তার নামের সমার্থক হয়ে দাঁড়ায় নগরবাসীর অবহেলা আর অসচেতনতায়। শিল্পকারখানার নানা বর্জ্য আর ক্যামিকেলে দূষণক্লিষ্ট হয় তার জলরাশি।

সরকারি নানা উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে লাবণ্য ফিরছে বুড়িগঙ্গার। অবৈধ দখল উচ্ছেদে এরই মধ্যে নিজের স্বরূপ ফুটে উঠেছে অনেকটা। নদীর এমন পুনর্বাসনে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। স্বস্তি প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরাও।

সম্প্রতি রাজধানীর বুড়িগঙ্গা তীরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে এমনই ইতিবাচক পরিবর্তনের চিত্র।

বছর দুয়েক আগেও কেউ অবসরে কিংবা বৈকালিক ভ্রমণে বুড়িগঙ্গাকে বেছে নেওয়ার কথা চিন্তাও করত না। এখন আশপাশেই নানা বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও অনেকে বিকেল হলে ছুটে আসেন এই নদীর তীরে। দুই পাড় ঘিরে জমে ওঠে নানা বয়সী মানুষে আড্ডা। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গার বুকে ঘুরে বেড়ায়।

পানি দূষিত হয়ে পড়েছিল বলে বুড়িগঙ্গায় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল মাছ। কোনো জেলে নৌকা চোখে পড়েনি বহুদিন। সেই বুড়িগঙ্গায় আবার আঁচল পেতেছেন জেলেরা। ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রাণের স্পন্দন বুড়িগঙ্গার জলতরঙ্গে।

কথিত আছে, গঙ্গা নদীর একটি ধারা প্রাচীনকালে ধলেশ্বরী হয়ে সোজা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিশেছিল। পরে সেই ধারাটির গতিপথ পরিবর্তন হলে গঙ্গার সঙ্গে তার সংযোগবিচ্ছেদ ঘটে। তবে প্রাচীন গঙ্গা এই পথে বইত বলে এমন নামকরণ।

ঢাকার ইতিহাসে দেখা যায়, নবাবী আমলে ঢাকাবাসী অনায়াসে এই নদীর পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়া বোতলজাত করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো। তবে ঢাকার নগরায়ণ বৃদ্ধির থাবা পড়ে বুড়িগঙ্গার বুকে।

বিশেষ করে বিগত ৩০-৪০ বছরের নগর জীবনের বিরূপ প্রভাবে দূষিত হয়ে পড়ে বুড়িগঙ্গা। অতিমাত্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নদী দখল, কাঁচামালের বর্জ্য, শিল্পবর্জ্য, ট্যানারি বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, ইটভাটা, পলিথিন ইত্যাদির কারণে বুড়িগঙ্গা দূষিত বর্জ্যরে আধারে পরিণত হয়ে পড়ে নদীটি।

আগে মাছ না মিললেও এখন জেলেদের জালে মাছ পড়ছে। কামরাঙ্গীরচর ও মোহাম্মাদপুরের দিকে মাছ বেশি ধরা পড়ছে বলে ভাষ্য তাদের। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে কালি বাউশ, টেংরা, চাপিলা, পুটি, নলা, রুই, কাতল, বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, বাইনসহ নানা প্রজাতির মাছ।
আমজাদ হোসেন নামের এক জেলে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমাদের দিন ফিরছে। বুড়িগঙ্গা বাঁচলে আমার মতো বহু জেলে বাঁচবে।’

ভয়াবহ দূষনের কবলে থাকা এ নদীকে বাঁচাতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি এরইমধ্যে নানা কার্যকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নদীর গভীরে জমে থাকা ময়লা নিয়মিত উত্তোলন, ময়লা না ফেলার জন্য নগরবাসীর কাছে লিফলেট বিতরণ, ফেসবুক, ইউটিউবে সচেতনতামূলক প্রচারণা।

বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ন পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসব কার্যকরী পদক্ষেপের পাশাপাশি যারা নদীতে ময়লা ফেলছে প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অর্থ জরিমানা করা হচ্ছে।’

যে কোনও মূল্যেই নদীকে তার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে বিআইডব্লিউটিএ জোরালো ভাবে কাজ অব্যাহত রাখবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

পুরনো ঢাকার বাসিন্দারাও চাইছেন বুড়িগঙ্গা আগের রূপে ফিরে যাক। এ নদী ঘিরে তাদের স্বপ্নেরও শেষ নেই। কারণ বুড়িগঙ্গার মাঝেই যেন তারা ঢাকার ঐতিহ্যকে খুঁজে পান।
সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা নওশের মল্লিক বলেন, ‘আমরা চাই বুড়িগঙ্গাকে আগের মতো দেখতে। এই নদীকে ঘিরে কতো স্মৃতি এখনও মনে ভর করে। যদি মিল ফ্যাক্টরী ও ঢাকার বর্জ্য-আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় ফেলা বন্ধ করা যায় তাহলে সারাবছরই বুড়িগঙ্গার পানি টলটলে থাকবে। এজন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা জিয়াউল হক নিয়মিত পারাপার করেন এই নদী। তিনি বলেন, ‘গত এক যুগে যা হারিয়ে গিয়েছিল তা আবার যেন আবার ফিরে পেয়েছি। স্বচ্ছ পানির প্রবাহে নদীর চেহারাই পাল্টে গেছে। এমনটাই সবসময় দেখতে চাই বুড়িগঙ্গাকে।’

কেরানীগঞ্জের ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিদুল ইসলাম জানান, ‘বিশ^বিদ্যালয় যেতে ও নানান কাজে তাকে প্রতিদিন এই নদী পার হতে হয়। কয়েক দিন আগেও নদী পার হলে দূর্গন্ধে মাস্ক ব্যবহার করতে হতো। অতিমাত্রায় দূর্গন্ধের ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। কিন্তু এখন বুড়িগঙ্গার পানি বিশুদ্ধ হওয়ায় নদী পার হতে স¦াচ্ছন্দবোধ করছেন তিনি।

নদীকে সুরক্ষা ও দূষণ মুক্ত রাখতে নগরবিদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্নসাধারন সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নদীর নিজস¦ অভিবাবক নেই। নদীর অনেক রকম মালিক রয়েছে। তাদের পরস্পরের সমন্বয় নেই।’

পরিবেশবিদদের মতে, নদীর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে মানুষ গড়ে তুলছে শহর ও ব্যবসাকেন্দ্র। তাই সঙ্গত কারণেই নদীকে রক্ষা ও দূষনমুক্ত রাখতে হবে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security