ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মৃত্যুর আগে তনু যৌন নিগ্রহের (সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স) শিকার হয়েছিলেন। তবে এ প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়দফা ময়নাতদন্তের আড়াইমাস পর রোববার (১২ জুন) এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করলো মেডিকেল বোর্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডিতে) তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রতিবেদন সিআইডিতে পাঠানো হয়।
সে সময় ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত থাকায় প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকেদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন নি।
পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্যে তনুর মরদেহ তোলার পর দেখা যায় এতে পচন ধরেছে। সে কারণে দ্বিতীয় প্রতিবেদনে তেমন কোনো নতুন আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সেক্সুয়েল ইন্টার কোর্সের (যৌন নিগ্রহ) আলামত পাওয়া গেছে।’
মৃত্যুর আগে সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। একই সঙ্গে ভিক্টোরিয়া কলেজের এ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কেও জানাতে চাননি এ চিকিৎসক। ধর্ষণ নিয়ে বারবার শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলেছেন, দ্বিতীয় ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের ‘সেক্সুয়েল ইন্টারকোর্সের’ আলামত পাওয়া গেছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডা. কামদা প্রসাদ সাহা যা বলেছেন তাতে তনু যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।
“যেহেতু দশ দিন পর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, মৃতদেহ পচা ছিল, দশ দিন পর পচা গলা মৃতদেহ থেকে নতুন করে কোনো ইনজুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।
তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশকে আরও তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তেও অস্পষ্টতা থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কুমিল্লার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা, যারা তনু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
চৌদ্দগ্রামের একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যপক মীর শাহ আলম প্রশ্ন করেন, তাহলে তনু ‘মরল কীভাবে?
“দেশবাসী চায় কালক্ষেপণ না করে তনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ দেশবাসীর কাছে উম্মোচন করা হোক। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।”
কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক বলেন, “৭৪ দিন পর যে ময়নাতদন্ত দেওয়া হল তা মেনে নেওয়া যায় না। এটা দৃষ্টিকটূ।”