পুরোহিত, সেবক, ভিক্ষু, পাদ্রিসহ একের পর এক হত্যায় ক্ষোভ জানিয়ে তা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আঙুল বাঁকা করার’ আহ্বান জানিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, হত্যা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে আঙুল বাঁকা করতে হবে। আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শুক্রবার (১০ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে পুরোহিত গোপাল গাঙ্গুলী, সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেসহ ধর্মযাজক, বৌদ্ধভিক্ষু, মুয়াজ্জিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় বক্তারা পুরোহিত গোপাল গাঙ্গুলী, সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডে, পুলিশের স্ত্রীসহ সকল হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনের আয়োজন করেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন,‘ আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রী আপনি এ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা না করতে পারলে জনগণকে বলুন। তারাই কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি লিটন কুমার পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জন হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যাবে, যদি এখনই এ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি না দেয়া হয়। শুধু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নয়, মজসিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকেও হত্যা করা হচ্ছে। অবিলম্বে ব্যবস্থ না নিলে এ দেশ ব্যর্থ জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, আজও ঠিক একইভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত ও সেবকদের হত্যা করা হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী কঠোর হোন। আঙুল বাঁকা করুন।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মণ্ডল বলেন,‘আর সহ্য করা হবে না। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে।’
শুক্রবার সকালে পাবনা জেলার হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে (৬২) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
গত মঙ্গলবার (৭ জুন) ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কড়াতিপাড়া গামে একজন হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকাল ৯টার দিকে করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে করে কালীগঞ্জ উপজেলার একটা বাড়িতে পুজোর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন পুরোহিত আনন্দ গোপাল। ওই সময় মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মাঠের ভেতরে মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক ওই পুরোহিতকে বিলের মাঝখানে ফেলে গলা কেটে খুন করে চলে যায়।
এ ছাড়াও রোববার (৫ জুন) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার খ্রিস্টানপাড়ায় নিজের দোকানে খুন হন সুনীল গোমেজ (৬০)। সুনীর খ্রিস্টানপাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। বাসার পাশেই তার দোকান। তার ভাই প্রশান্ত গোমেজ দিনাজপুরে একটি চার্চের ফাদার। যে জেলাটিতে সম্প্রতি এক খ্রিস্টান পাদ্রি আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এ ছাড়াও একই দিন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।