মুহাম্মদ আলী একজন সাবেক মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা, ৩বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাপিয়ন এবং ওলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী। ১৯৯৯ সালে মুহাম্মদ আলীর নাম বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাট্রেটেড স্পোর্টসম্যান অব দ্যা সেঞ্চুরী অথবা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে।
আলী জন্মগ্রহণ করেছিলেন লুইসভিলা, কেন্টাকি তে। তিনি তার নাম তার বাবা ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র এর নাম অনুসারেই রাখা হয়েছি, যার নামকরণ করা হয়েছিল একজন দাসপ্রথা বিরোধী রাজনীতিবিদ ক্যাসিয়াস ক্লে এর নামানুসারে। আলী ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলাম এ যুক্ত হলে এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম পরিবর্তন করেন।
মুহাম্মদ আলী ১৭ই জানুয়ারি ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ক্লে সিনিয়র সাইনবোর্ড এবং বিলবোর্ড রঙ করতেন এনং তার মা ওডিসা গ্র্যাডি ক্লে একজন গৃহিনী ছিলেন। যদি ক্লে সিনিয়র একজন মেথডিস্ট ছিলেন কিন্তু তার সন্তানদের বাপ্টিস্টে নিতে তার স্ত্রীকে অনুমতি দিতেন।
বক্সিং জীবনের শুরু
১৯৫৪ সালের একদিন আলির সাইকেল চুরি হয়ে যায় তখন সে পুলিশ অফিসারকে(মার্টিন) জানায় যে সে চোরকে পেটাতে চায়। অফিসার(সে শহরের বক্সীং কোচ) তাকে বলে যে এর জন্য তাকে লড়াই করতে জানতে হবে। পরদিন তিনি মার্টিন এর কাছ থেকে বক্সিং শেখা শুরু করেন। তিনি তাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাতে হয়। ১৯৬০ সালে তিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন।
৬’৩’’ উচচতার আলির বিশেষত্ব ছিল তিনি খেলার সময়ে সবার মত হাত মুখের সামনে রাখতেন না, শরীরের পাশে রাখতেন। প্রতিপক্ষের মার ঠেকানোর জন্য নির্ভর করতেন সহজাত প্রবিত্তির উপর। ২৯-১০-১৯৬০ এ তিনি প্রথম পেশাদার লড়াই জেতেন। ১৯৬০-১৯৬৩ তিনি টানা ১৯টি লড়াই জেতেন যার মধ্যে ১৫টি নকআউট। ১৯৬৩ সালে তিনি ডগ জোন্স এর সাথে ১০ বাউটের এক বিতর্কিত লড়াই এ জেতেন।
এর পর তিনি শিরোপাধারী সনি লিসটন এর প্রতিদ্বন্ধী হিসাবে গন্য হন, কিন্তু কেউ আশা করেনি যে তিনি জিতবেন। লড়াই এর আগে তিনি ঘোষনা দেন তিনি প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাবেন।
লিসটন ছিলেন অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাষী। কিন্তু আলির ক্ষিপ্রতা তাকে লিস্টনের ঘুষি থেকে বাচিয়ে দেয়। তার উচ্চতার কারনে তিনি তাকে ঘুষি মারতে সক্ষম হন। ৪র্থ রাউন্ডে লিস্টন সামলে উঠেন। এ সময়ে আলির চোখে ধুলো ঢোকায় তিনি ঠিকমত দেখতে পারছিলেন না। তিনি শুধু লিস্টন ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন। ৬ষ্ঠ রাউন্ডে আলি সামলে উঠেন, এবং ৭ম রাউন্ডে লিস্টন পরাজয় মেনে নেন, যা অনেকের মনে ম্যাচটি পাতানো বলে সন্দেহর উদ্রেক জাগায়।
মার্চ ১৯৭১ সালে আলি জো ফ্রেজিয়ারের মুখোমুখি হন যা ‘শতাব্দীর সেরা লড়াই’ হিসাবে পরিচিত। বহুল আলোচিত এ লড়াইটি ছিলো দুই মহাবীরের লড়াই যা সকলকে শিহরিত করে। জো ফ্রেজিয়ার খেলায় জয়লাভ করেন ও আলি প্রথমবারের মত পরাজিত হন। ১৯৭৪ সালের ফিরতি লড়াইয়ে তিনি অবশ্য শিরোপা পুণরুদ্ধার করেন।
মুসলমান ধর্ম গ্রহণ
১৯৭৫ সালে তিনি মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেন। তার মতে এ জন্য ভুমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিম এর প্রধান ডব্লু. ডি. মুহাম্মদ।
১৯৭৫ সালে আলি লড়াই করেন ফ্রেজিয়ার এর সাথে। দুজন বীরের এ লড়াইএর জন্য সকলে খুবই উত্তেজিত ছিল। ১৪ রাউণ্ডের শেষে ফ্রেজিয়ার এর কোচ তাকে আর লড়াই করতে দেননি কারণ তার এক চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফ্রেজিয়ার এর কিছুদিন পরই অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের এক লড়াইএ তিনি ১৯৭৬ এর অলিম্পিক মেডালিস্ট লিয়ন স্পিংক্স এর কাছে খেতাব হারান। তিনিই প্রথম যিনি একজন অপেশাদার এর কাছে হেরেছিলেন। ১৯৭৯ তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর গ্রহণ
তবে তিনি ১৯৮০ সালে ফিরে আসেন ল্যারি হোমস এর কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিতে। ল্যারি ছিলেন তার শিষ্য তাই সকলেই লড়াইটি নিয়ে আগ্রহী ছিল। ১১ রাউন্ড পর আলি পরাজিত হন। পরে জানা যায় মস্তিস্কে মারাত্বক ত্রুটি ধরা পরেছে। তার মস্তিস্ক ফুটো হয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন(৫৬ জয় ৩৭টি নকআউটে ৫ পরাজয়)। তিনি “সর্বকালের সেরা” বক্সার।