পাদপ্রদীপের বাইরে থেকে যারা সমাজের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন সরকার তাদেরও সম্মান জানাতে চায় বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য ১৫ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে এ কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে পুরস্কারজয়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে পদকপ্রাপ্তদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাতে অন্যরা কাজ করেন সে প্রত্যাশা জানান শেখ হাসিনা।
আলোচনার বাইরে থাকা গুণীদের সম্মান জানানোর আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকেই আছেন। তাদের খবরও হয়তো আমরা পাই না।“কিন্তু আমরা চাই তাদের খবর যেন আমরা পাই। যে যেখানে যেভাবে সামাজিক উন্নয়নে,দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বা দেশের সাংস্কৃতিক জগতে, সাহিত্য জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে .. আমরা যেন তাদেরকে সন্মান করতে পারি।”
এজন্য ওই সব গুণীদের সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্তি প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে তথ্যগুলো আমাদের জানা একান্তভাবে দরকার।
“আগামীতে সে তথ্য আমরা আরও পাব। আমরা তাদেরকে সন্মাননা দিতে চাই শুধু এই কারণেই, তারা যে দেশের জন্য অবদান রাখলেন, জাতির জন্য অবদান রাখলেন, জাতির জন্য একটা পথিকৃত সৃষ্টি করে গেলেন, আমরা সেই স্বীকৃতিটা দিয়ে যেতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নির্যাতিত নারী এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন।
২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বছর ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।“যারা কাজ করেন, তারা পুরস্কারের আশায় কাজ করেন না। দেশের সেবা, মানুষের কল্যাণ- এই চিন্তা মাথায় রেখেই তারা কাজ করে যান।”
জাতির সার্বিক উন্নয়নে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের সন্মানিত করলে আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“আর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অবদান রেখেছেন, তারা তাদের জীবনকে দেশমাতৃকার জন্য উৎসর্গ করেছেন, সব সময় তারা আমাদের জন্য বরেণ্য।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করা হয়।
দেশের উন্নয়নে পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সেটা ঘোষণা দিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমাদের গৃহীত সামাজিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
“২০২১ সালের পূর্বেই আমরা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারব- এই বিশ্বাস আমার আছে।”
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ৩২৭ জন বিদেশি বন্ধু ও ১১টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের পাশে দাঁড়িছিলেন, আমি মনে করি, এটা আমাদের কর্তব্য তাদের সন্মাননা দেওয়া।”
স্বাধীনতার চেতনায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আসুন, লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।”
পদকপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে সৈয়দ হাসান ইমাম অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “পদক পাওয়ার আশায় কেউ কাজ করে না। অন্তরের তাগিদেই কাজ করেন। দেশ ও জাতি তার কাজের মূল্যায়ন করলে, তিনি মানবকল্যাণ ও সৃজনশীল কাজ করতে আরও উৎসাহিত হন।”
এই পদক প্রদান নতুন প্রজন্মকে সমাজকল্যাণ ও সৃষ্টিশীল কাজে ব্রতী হতে উৎসাহিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এরআগে পদকপ্রাপ্ত এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।