শনিবার, এপ্রিল ১৩, ২০২৪

ছোট্ট সোনামণির প্রথম স্কুল

যা যা মিস করেছেন

Kids first school the mail bd

 

ছোট্ট সোনামণি যাবে স্কুলে। আজই প্রথম স্কুল ওর। নতুন জামা, নতুন জুতা পরে একেবারে তৈরি সে। মামণি ওর ছোট্ট চুলে করে দিয়েছে লাল টুকটুকে ঝুঁটি। বাবার দেওয়া বারবি ডলের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে রওনা হয়ে গেল সে। মায়ের হাত ধরে পৌঁছে গেল স্কুলের গেটে। মামণি বাই বলে যেই হাতটা ছাড়ল, অমনি মামণি… বলে শুরু করল চিৎকার। ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুলের গেট। কান্নাকাটি করে একাকার। কান্না থামাতে না পেরে স্কুল থেকে ফোন দিয়ে আনা হলো ওর মামণিকে। তারপর বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে আসা হলো।

বছরের এ সময়টায় অনেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। প্লে গ্রুপে ভর্তি হওয়া প্রায় সব ছোট্ট সোনামণির অবস্থাই কিন্তু এই রকম ।

স্কুলের অধ্যক্ষরা  বলেন, পরিবারে সবার আদরে বড় হওয়া শিশুটি যখন মায়ের কোল ছেড়ে প্রথম পা ফেলে স্কুলের প্রাঙ্গণে, তখন নতুন পরিবেশে সে অনেকটা ভড়কে যায়।

তাই প্রথম প্রথম স্কুলে আসার এ সময়টায় শিশুর প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে। স্কুলটা ভয়ের নয়, ভরসার স্থান বা জায়গা, এটা ওকে বোঝাতে হবে। যেহেতু ঘরের বাইরের পরিবেশে তার প্রথম পা, তাই অচেনা পরিবেশটি তার কাছে নির্ভরতার পরিবেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।

আগে বিভিন্ন স্কুলে প্লে গ্রুপের শিশুদের সঙ্গে মায়ের বা বাবার প্রবেশ করার অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন আর সেটি করা হয় না। বরং স্কুলের গেট থেকেই বাবা ও মাকে চলে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁদের স্বাগত জানানোর কৌশলটি হতে হবে একেবারেই মায়ের মতো। সেটা আঙুল ধরে হতে পারে বা কোলে তুলেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাটিও কম নয়। শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসার আগে তাকে গল্প করে স্কুলের সুন্দর একটি বর্ণনা দিতে হবে, যাতে কল্পনাপ্রবণ শিশুটির কল্পনায় স্কুলটি হয় আনন্দের স্থান।

সাধারণত আমাদের অন্যান্য ক্লাস শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে প্লে গ্রুপের ক্লাস শুরু হয়, যাতে সব শিক্ষক তাদের আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাদানের জন্য উপযোগী করতে পারেন।

প্লে গ্রুপের শিশুদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কান্নাকাটি ছাড়াও, অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারা, বসা নিয়ে টুকটাক মারামারি, খাবার কেড়ে নেওয়া, টিফিনটা ঠিকমতো না খাওয়া, অন্য বন্ধুর পেনসিল নিয়ে আসা, ক্লাসে প্রস্রাব-পায়খানা করে দেওয়া, ছোট ছোট মিথ্যা বলা এ বিষয়গুলো। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকটি সবার আগে বলে মনে করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান।

পরিবার থেকেই শিশু প্রথম মানুষের সঙ্গে মেশার ও নৈতিকতার শিক্ষা পায়। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে মেশার সুযোগ দিতে হবে। তার সঙ্গে সব সময় সত্য কথা বলতে হবে। কারও কোনো জিনিস নেওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞেস করার শিক্ষাটা দিতে হবে। তাহলে সে স্কুলে এসে এ বিষয়গুলো তার বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করবে।

ছোট্ট শিশু তাই হঠাৎ করে ক্লাসে প্রস্রাব-পায়খানা করে বসতে পারে। এ ক্ষেত্রে খুব দ্রুত তাকে সরিয়ে নিতে হবে। যেন ওর বন্ধুরা বুঝতে না পারে। ওকে নিয়ে হাসাহাসি করার সুযোগটা যেন দেওয়া না হয়। সেটা হলে ও লজ্জায় স্কুলে আসতে চাইবে না। এ ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব হলো, তার ব্যাগে একটি অতিরিক্ত পোশাক রাখা। আর শিক্ষকের কাজ হচ্ছে, ছোট শিশুদের কিছু সময় পরপর কানে কানে জেনে নেওয়া যে ওর প্রস্রাব-পায়খানা পেয়েছে কি না।

প্লে গ্রুপের শিশুদের আসলে খুব আদর ও ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করতে হয়। তাদের কোনোভাবেই কোনো কিছু নিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এটা ভালো না। খুব সুন্দর করে সেটা ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

শিশুর সঙ্গে ব্যবহার হতে হবে ইতিবাচক, যাতে স্কুলকে সে ভয় না পায়। কোনো সুন্দর কাজ করলে তাকে হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। প্রশংসা করলে সে খুব খুশি হবে। তাকে চকলেট, কার্টুন, কার্ড—এসব উপহার দেওয়া যায় ঠিকমতো কোনো কাজ করতে পারলে। প্লে গ্রুপটা মূলত পড়ালেখার চেয়ে সামাজিকতা, নিজের কাজটা শেখানো ও সবার সঙ্গে মেশার কাজটা বেশি করে।

প্রথম ক্লাসটা শুরু হয় জাতীয় সংগীত দিয়ে। শোনানো হয় ছড়াগান। সবাইকে খেলতে দেওয়া হয় কখনো কখনো। আবার অনেক সময় কম্পিউটারে চলে কার্টুন দেখানো। টিফিনের সময়ে ওদের শেখানো হয়, কীভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সবার সঙ্গে ভাগাভাগি কর টিফিন খাওয়ার অভ্যাসটাও করিয়ে নেওয়া হয়। ওদের শেখানো হয় রং করাটাও। গোলাকার, আয়তাকার বা সরলরেখা আঁকিবুঁকি করতে দেওয়া হয় ইচ্ছামতো।

আপেল, কমলা এসব বাস্তব জিনিস দিয়ে শিশুদের চেনানোও হয়। কীভাবে বাঁধতে হবে জুতার ফিতা, ব্যাগে বই কীভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে তাও শেখানো হয়। দাঁত ব্রাশ করা, নখ কাটা এগুলোও শেখানো হয় স্কুলেই।

মাঝেমধ্যে কোনো শিক্ষিকা ক্লাসের সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান ঘুরতে। অনেক সময় কাটে শিশুদের স্কুলে, তাই এ সময়ে যত আনন্দময় করে তোলা যায়, শিশু তত বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে স্কুলে আসতে।

তবে  শিশুর প্রথম গড়ার কারিগর তার পরিবার। পরিবারের পরিবেশে যদি সে নিরাপদ মনে করে নিজেকে, তবে স্কুলে গিয়েও নিরাপত্তার অভাব বোধ করে না। তাই বাবা-মাকে শিশুকে যথাসম্ভব সময় দিতে হবে। আর শিক্ষকদের হতে হবে একেবারে আপনজনের মতো। যেন স্কুলটি আনন্দের জায়গা। তবে দেখবেন শুক্রবার বা বন্ধের দিনেও স্কুলে যেতে সকালে উঠে তৈরি হয়ে বসে থাকবে শিশুটি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security