মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার যে দাবি মুসা করেছেন, এর সপক্ষে দুদককে যথাযথ তথ্য দিতে পারেননি তিনি। তাই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদক আইন ২৬ (১) ও (২) ধারায় মুসার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধানে গত ৪ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিলেন অনুসন্ধানী কর্মকর্তা। কিন্তু একদিন আগেই উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ ডেথ ফোবিয়ার (মৃত্যু আশঙ্কা) কথা জানিয়ে হাজিরা দিতে তিন মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি বিবেচনা করে ১০ কর্মদিবস সময় দিয়ে ২৮ জানুয়ারি ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে মুসা বলেছেন, সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) ‘ফ্রিজ’ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) দামের অলংকার জমা রয়েছে।
যৌথ অ্যাকাউন্টকাধারীদের মাঝে তারই নিজস্ব অ্যাকাউন্টে এই টাকা আছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে যৌথ অ্যাকাউন্টধারীদের সঙ্গে ডিড অব অ্যাগ্রিমেন্ট থাকার কারণে ওই অ্যাকাউন্টে অন্যদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে এবং ওই অ্যাকাউন্টের অংশীদার কতজন সে বিষয়ে তিনি কিছু উল্লেখ করেননি।
এ ছাড়া, সম্পদ বিবরণীতে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুলশানের ৮৪ নম্বর রোডে দ্য প্যালেস নামে ১৫ নম্বর বাড়িটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন মুসা বিন শমসের।
ওই বাড়িটি তার নামে ছিল। পরে তিনি তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চৌধুরীকে বাড়িটি দান করেছেন। এ ছাড়া গাজীপুর ও সাভারে তার নামে ১২০০ বিঘা জমি রয়েছে। তার কাছে ওইসব জমির দলিল থাকলেও জমিগুলো দখলে নেই। জমিগুলোর দখল ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৪ সালের জুন মাসে বিজনেস এশিয়া নামের একটি সাময়িকীতে মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি দল বিষয়টি অনুসন্ধান করে।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।