বিশ্ব ক্রিকেটেই এখন তাঁকে নিয়ে অসীম কৌতূহল। ভারতে যে আরেকটু বেশি, তাতে একটুও অস্বাভাবিকত্ব নেই। স্লোয়ার আর কাটারের মায়াজালে প্রথম ধাঁধা লাগিয়েছিলেন তো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চোখেই। ভারতীয় দর্শকেরা তাই তাঁকে চর্মচক্ষে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। অপেক্ষায় ছিল বিশ্বমঞ্চও।
আর তিনি, মুস্তাফিজুর রহমান কাল ধর্মশালার নেটে একটি বলও করলেন না। করলেন না মানে করতে পারলেন না। বাকি পেসাররা যখন তেড়েফুঁড়ে বোলিং করছেন, তিনি একটা বল হাতে বিষণ্ন মুখে পেছনে দাঁড়িয়ে। কয়েকবার বলটা নিয়ে ক্যাচ-ক্যাচ খেললেন। ডান পাঁজরের নিচের দিকের চোট এখনো এতটাই ভোগাচ্ছে যে বিশ্বমঞ্চে আজ মুস্তাফিজুরের অভিষেক হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
হল্যান্ডের অধিনায়ক পিটার বোরেন কোনোভাবে খবরটা জেনে গিয়েছেন কি না কে জানে, নইলে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রশংসা করতে গিয়ে কেন মুস্তাফিজুরের কথা বলবেন না! তাসকিনের কথা বললেন, আল আমিনের কথাও। সংবাদ সম্মেলন শেষে মুস্তাফিজুরের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পর অবশ্য জিব কাটার ভঙ্গি করে বললেন, ‘ওহ্, ওই ছেলেটাও দারুণ বোলার।’
সেই ‘দারুণ বোলার’ এখন বাংলাদেশ দলের বিষম দুশ্চিন্তার কারণ। নেট প্র্যাকটিসের প্রায় পুরোটা সময়ই ট্রেনার আর ফিজিওর তত্ত্বাবধানে নানা রকম ফিটনেস ড্রিল করে গেলেন। যত না ফিটনেস ড্রিল, তার চেয়ে বেশি মনে হলো পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া। একবার জার্সিটা তুলে দেখালেন সমস্যাটা কোথায়। আজ হল্যান্ডের বিপক্ষে তো নয়ই, প্রথম পর্বেই খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়েই এখন ঘোরতর সংশয়।
নামেই প্রথম পর্ব। আসলে তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসল পর্বে যাওয়ার বাছাই, যাতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ। মুস্তাফিজুরকে ছাড়াই হয়তো সেই বৈতরণি পেরোনোর পরিকল্পনা করতে হচ্ছে মাশরাফি-হাথুরুসিংহেকে।
আগের রাতে টানা বৃষ্টি আশঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছিল, মাঠের সঙ্গে কোনো পরিচয় ছাড়াই না বাংলাদেশকে ম্যাচ খেলতে নেমে পড়তে হয়। কাল সকাল থেকেই অবশ্য ঝকঝকে রোদ। সেই রোদে ধর্মশালা স্টেডিয়ামের পশ্চাৎপটে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়রাজি আরও অপরূপ। ওই পাহাড়রাজির নাম ধবলধার, যেটির নামকরণের সার্থকতা বুঝতে একটুও সমস্যা হচ্ছে না।
‘ধবল’ মানে সাদা, তুষারে তুষারে সব সময়ই ধবধবে সাদা হয়ে থাকছে কোনো না কোনো পাহাড়। সাদা আর কালো মিলিয়ে অপূর্ব এক দৃশ্য। তা দেখে নিশ্চয়ই মুগ্ধ হয়েছেন মাশরাফিরা, তবে সেটিতে ডুবে থাকার সময় কই! ওই পাহাড়ই যে নতুন একটা সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার ফুট উঁচুতে এই মাঠ। দৌড়ানোর সময় তাই শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। মাশরাফিকে এ নিয়ে একটু চিন্তিতই মনে হলো, ‘এখানে আবহাওয়াটা একটু অদ্ভুত। দিনে খুব গরম লাগছে, আবার বিকেল থেকে খুব ঠান্ডা। মাঠে যখন আমরা দৌড়ালাম, শ্বাস নিতেও একটু সমস্যা হচ্ছিল। ম্যাচে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে যদি পড়ি, তখন শ্বাস নিতে সমস্যা হলে কী হবে এটাই ভাবছি।’
কয়েক দিন আগে আসতে পারলে এটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যেত। এশিয়া কাপ আসতে দেয়নি। তবে এখানে দুই দলের মধ্যে সাম্যাবস্থাই বিরাজমান। বেশ কদিন আগে ভারতে পা রাখলেও হল্যান্ড দল বেঙ্গালুরু আর চণ্ডীগড়েই থেকেছে। বাংলাদেশের মতো ডাচরাও ধর্মশালায় এসেছে গত পরশু। পিটার বোরেনদেরও তাই এ মাঠ ও এর আনুষঙ্গিক সমস্যার সঙ্গে কালই প্রথম পরিচয়।
এশিয়া কাপ বাংলাদেশকে যেমন সমস্যায় ফেলেছে, আবার দিয়েছেও অনেক। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল খেলার আত্মবিশ্বাসও অদৃশ্য দ্বাদশ খেলোয়াড় হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশের সঙ্গে। ডাচ অধিনায়ক তাই বাংলাদেশকে গ্রুপে পরিষ্কার ফেবারিট বলে নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছেন।
টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের দ্বৈরথে যে ১-১ সমতা, সেটি তাঁর কাছে কোনো গুরুত্বই পাচ্ছে না। ওই দুটি টি-টোয়েন্টি ২০১২ সালের এপ্রিলে, হেগে। প্রথমটিতে বাংলাদেশ সহজেই জিতেছিল, শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া দ্বিতীয়টিতে হেরেছিল ১ উইকেটে। তামিম ইকবালের ওই সিরিজটা খুব ভালো মনে আছে। দুই ম্যাচেই যে ফিফটি করেছিলেন। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৬৯, দ্বিতীয়টিতে ৫০। তামিমের কাছে আজও দল এমন কিছুই চাইছে। সৌম্যর সঙ্গে মিলে যদি ঝোড়ো একটা সূচনা করে দিতে পারেন, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা যা হওয়ার তা শুধু ডাচদেরই হবে!