গত বছরের নভেম্বরে সুপারস্টার অভিনেতা আমির খানের এক মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয় গোটা ভারতজুড়ে। তার বিরুদ্ধে রাজপথে নামে অসংখ্য মানুষ। তাকে ভারতে নিষিদ্ধ করতেও তোরজোড় উঠে।
আমির খান সেদিন বলেছিলেন ‘ভারত একটি অসহিষ্ণু রাষ্ট্র’! আর এইজন্য গত দশ বছর ধরে ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’র দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। আর এইসব বিষয় নিয়েই খোলাখুলি কথা বললেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত তারকা অভিনেতা আমির খান।
সম্প্রতি ইন্ডিয়া টিভিতে ‘আপ কি আদালত’ নামের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে রজত শর্মাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গত বছরের নভেম্বরে ‘অসহিষ্ণুতা’র ইস্যু নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন আমির খান।
প্রথমত তিনি বলেন দেশ মাতৃকাকে কখনোই ব্র্যান্ড হিসেবে দেখেন না তিনি। আর সে কথা জানিয়ে টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারত আমার কাছে মায়ের মত। এটা কখনোই ব্র্যান্ড হতে পারে না। আমি কখনোই আমার দেশমাতৃকাকে ব্র্যান্ড হিসেবে দেখি না। অন্যকারো কাছে হয়তো ভারত ব্র্যান্ড হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে না। যেদিন থেকে আমি ভারতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছি তারপর থেকে সারাজীবন তাই করে যাব। এমনকি ভারত সরকার যদি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আমাকে নাও রাখেন তারপরও আমি ভারতের জন্যই কাজ করে যাবো।
এমনকি গত দশ বছর ধরে যে ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার’ জন্য ভারতের ব্র্যান্ড অ্যম্বাসেডর পদে আসিন হয়েছেন আমির খান এর বিনিময়ে তিনি একটি পয়সাও নেননি বলেও সাক্ষাৎকারে জানান আমির খান। আর ভবিষ্যতেও কোনো পয়সা নিবেন না বলে জানান আমির।
তাহলে তার স্ত্রী কেন সেসময় ভারত ছেড়ে যেতে চাইছিল এমন প্রশ্নের জবাবে আমির বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী কখনোই ভারতে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি। ভারত ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো! এই দেশেই জন্মেছি, এই দেশেই মরবো। কিন্তু সবকিছুর পরেই কিরন(আমিরের স্ত্রী) একজন মা। আর একজন মা সবসময় তার সন্তানদের নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। হ্যাঁ, কিরন আবেগে কিছু কথা হয়তো বলে ফেলেছিল, কিন্তু কখনোই ভারত ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি।
“কেউ কেউ আমার কথাগুলোকে ভিন্নভাবে মিডিয়ায় প্রচার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মানুষ যখনই ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছে, তখনই আমরা সতর্ক হয়েছি। আর তখনই হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান আর শিখ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসলে বিবাদ তৈরি করার জন্য ধর্ম খুব শক্তিশালী মাধ্যম। সবকিছুর পর আমরা ভারতীয়ও তো!”
এছাড়াও সাক্ষাৎকারে ভারতের টিভি মিডিয়াদের উদ্দেশে ভায়োলেন্স দেখানো বন্ধের আহ্বান জানান আমির খান। কারণ টিভিতে দেখানো ভায়োলেন্স দেখে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়। ভারতের এখন বেশির ভাগ মানুষই নাকি ভীতি রোগে আক্রান্ত। এ সম্পর্কে আমির বলেন, প্রত্যেক ভারতীয়ই প্রচন্ড ভয় নিয়ে থাকে। আমি মিডিয়ার কাছে আহ্বান জানাবো সব ধরনের ভায়োলেন্সকে হাইলাইট না করতে। এরফলে মানুষের মস্তিস্কে প্রচন্ড চাপ তৈরি হয়। সুস্থভাবে বাঁচতে যা বেঘাত ঘটায়।
উল্লেখ্য, অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে গেল বছরের নভেম্বরে প্রথমবার মুখ খুলেই রীতিমত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছিলেন আমির খান। রাখডাক না রেখেই তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থা ‘অসহিষ্ণু’ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি তার স্ত্রী কিরনরাও সন্তানদের নিয়ে এক ধরণের অনিরাপত্তার মধ্যে আছে বলেও সে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আমির। এমন মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠে। পুরো ভারত জুড়ে তার নামে চলে তর্ক-বিতর্ক। থানায় হয় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। রাজপথে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়, এমনকি তাকে দেশ ছেড়ে যাওয়ারও দাবী তুলেন কেউ কেউ।