দুই ছেলে, স্বামীর পর চলে গেলেন উত্তরায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ গৃহবধূ সুমাইয়াও। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হলেন। দগ্ধ হওয়ার ৯ দিনের মাথায় রোববার বিকালে মোহাম্মদপুরের বেসরকারি সিটি হাসপাতালের বার্ন, প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন সুমাইয়াকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
শনিবার রাতে দগ্ধ গৃহবধূ সুমাইয়াকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার ঢামেক থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক রাশেদ মাহমুদ জানান, সুমাইয়াকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। হার্ট ছাড়া শরীরের কোনো অংশই ঠিকমতো কাজ করছিল না। বিকাল সাড়ে ৩টায় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।
চল্লিশেই থেমে যাওয়া সুমাইয়াকে বরিশালে বাবার বাড়িতে দুই সন্তানের পাশে দাফন করা হবে বলে তার মামাতো ভাই আবু সুফিয়ান জানান।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের এক বাড়ির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে আগুন লেগে দগ্ধ হন সুমাইয়া, তার স্বামী ও তিন সন্তান।
চার জনের মধ্যে দেড় বছরের জায়ান বিন শাহনেওয়াজ ও শাহালিন বিন শাহনেওয়াজ (১৫) ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায়। পরদিন মৃত্যু হয় সুমাইয়ার স্বামী মো. শাহনেওয়াজের (৫০), যিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন মেইনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
এ পরিবারের মেজ ছেলে জারিফ বিন নেওয়াজকেও (১১) গত ১ মার্চ থেকে মায়ের সঙ্গে সিটি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রোববার সকালের দিকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার মামা আবু সুফিয়ান জানান।
জারিফের চাচা কামরুল হাসান জানান,আগামী বছরই শাহনেওয়াজের সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ওই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, ওই বাসার গ্যাসের চুলা বা লাইনে সমস্যা ছিল। এর ফলে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘর থেকে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে যায় এবং সকালে চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
নতুন বাসায় ওঠার পর শাহনেওয়াজ গ্যাসের গন্ধ পেয়ে বাড়িওয়ালাকে বিষয়টি জানালেও তিনি গুরুত্ব দেননি বলে স্বজনদের অভিযোগ।
কামরুলের অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করে রাখা হয়েছে।