সন্তানের কাছে মায়ের কোল সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। যে কোনো বিপদে পড়লে সন্তান প্রথমেই ছুটে যায় মায়ের কাছে। মা সান্ত্বনা দেয়াসহ সন্তানকে জীবন বাজি রেখে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু রামপুরার বনশ্রীতে ঘটলো ভিন্ন ঘটনা। যেখানে মায়ের কোলই হলো সন্তানের হন্তারক। নিজ হাতে আদরের ছেলে-মেয়েকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করলেন ‘মমতাময়ী’ মা। পরে অনুতপ্ত হলেন এবং কাঁদলেনও। আবার নিজেকে বাঁচাতে সাজালেন খাদ্যে ‘বিষক্রিয়ায়’ মারা যাওয়ার নাটক।
রাজধানীর বনশ্রীতে দুই সন্তানকে তাদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন হত্যা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়। এ ঘটনায় জেসমিনকে আটক করা হয়েছে।
দুই শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য জানাতে আজ দুপুর দেড়টার দিকে সংস্থার সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যার রহস্য উন্মোচনে শিশু দুটির বাবা-মা ও খালাকে জামালপুরের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাঁদের সাবধানে, সংবেদনশীলতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মা জেসমিন স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই তাঁর দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। হত্যার বিস্তারিত বিবরণও দিয়েছেন তিনি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালকের ভাষ্য, জেসমিনের বিবরণ অনুযায়ী, তিনি প্রথমে তাঁর মেয়ে নুসরাত আমানকে (১২) এবং পরে ছেলে আলভী আমানকে (৬) একই ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। হত্যার সময় মেয়ে জেগে ছিল, ছেলে ঘুমাচ্ছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর এ নিয়ে গল্প ফাঁদেন জেসমিন। বিশেষ করে তিনি শিশুদের লাশের ময়নাতদন্তও চাননি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালকের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না।
তাদের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থানায় এসেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বনশ্রীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় নুসরাত ও আলভীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে তারা মারা যায়। পরদিন লাশের ময়নাতদন্তে শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পান চিকিৎসক।
এ ঘটনায় শিশুদের বাবা আমান উল্লাহ, মা জেসমিন ও খালা আফরোজা মালেককে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরের নেওয়া হয়। তিনজনই জামালপুর শহরের ইকবালপুরে শিশুদের নানাবাড়িতে ছিলেন। সেখানে দুই শিশুকে দাফন করা হয়েছে।
জেসমিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন তাদের বাবা আমান উল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ মামলা হয়।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) বলেন, কাল শুক্রবার আসামি জেসমনিকে আদালতে পাঠানো হবে।
নুসরাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের (প্রধান শাখা) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। হলি ক্রিসেন্ট (ইন্টারন্যাশনাল) স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারিতে পড়ত আলভী।