আজ পয়লা ফাল্গুন, ফুল ফুটবার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে ওঠে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনে লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর। কবি তাই বলেছেন ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে…’
শুধু মিলনই তো নয়, প্রেমের সঙ্গে জড়িয়েথাকে নানা রকম শঙ্কা-সন্দেহও। তাই এমনও মধুর দিনে এমন শঙ্কাও কি জাগে না অধীর প্রতিক্ষায় থাকা কোন মনে। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে এখন প্রকৃতি।
গাছে গাছে নতুন পাতা, মুগ্ধসবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসে সঙ্গে বয়ে চলা জানান দিচ্ছে নতুন কিছুর। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী যেন এখন অলোকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগছে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলছে মধুর বসন্তে সাব বাজ রব।
আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই আজ গেয়ে উঠবেন-”মনেতে ফাগুন এলো,। তবে বাস্তবতার পাথর চাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী।
কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণচুড়া, আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে এলেও একালের তরুণ তরুণীরা বসে থাকতে রাজি নন।গায়ে হলুদ আর বাসন্তি শাড়ি জড়িয়ে হাতে হাত রেখে বেড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
পাঞ্জাবী পড়া তরুণরাও একদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজতে কম যান না।বসন্ত তারুন্যের তারুণ্যেরই ঋতু, তাই সবাই মনে বেজে ওঠে,কবির এ বাণী- বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পয়লা ফাল্গুন আনন্দের দিনে। এক দিন পরেই ভালবাসা দবিস এ যেন সোনার সোহাগা।
প্রকৃতি প্রেমিক মানুষরা তাই বসন্ত বরণে এখন উদগ্রীব। আজ বসন্তের প্রথমদিনে তাই নানা আয়োজনে নতুন পোষাক আর বাহারি সাজসজ্জায় তারণ্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার সারা প্রান্তরে।
আমাদের দেশে বসন্ত নিয়ে নানা কবিতা গান ছড়া রয়েছে। যা যুগযুগ ধরে আমাদের ঐহিত্যকে সমৃদ্ধ করছে। এমনি একটা গানের কলি যা দীর্ঘ দিন ধরে বসন্ত উৎসবে গীত হয়ে থাকে। বাংলা গানের দরাজ কণ্ঠের অধিকারী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যখন গেয়ে ওঠেন-
একটিও ফুল ফুটলো না তুমি বললে বসন্ত এসেছে এসেছে
একটিও পাখি গাইল না তুমি বললে বসন্ত এসেছে এসেছে
আবার কবিরকণ্ঠে ধবনিত হয় ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত…।
বাংলার কবি সম্রাট তথা বিশ্বকবি যখন লেখেন-আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে এতো বাশি বাজে। এভাবে বাঙালি তার চিরায়িত ভালোলাগা ভালবাসা আর হৃদয়ের অর্ঘ্য দিয়ে বরণ করে বসন্তকে তাই বসন্ত ঋতুরাজ আর তার প্রথম মাস হচ্ছে ফাল্গুন-সংক্ষপে ফাগুন।
অনুষ্ঠান সূচিঃ
১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।
বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি ফুলের প্রীতি বন্ধনী ও বসন্ত কথনের মাধ্যমে রাজধানীর চারটি স্পটে কাল বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
সকাল ৭টায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসঙ্গীতের মুর্ছনার মধ্যদিয়ে শুরু হবে বসন্ত আবাহন। চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানেই আবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বসন্ত বন্দনার উৎসব।
এছাড়া বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একযোগে বসন্ত আবাহনের উৎসব চলবে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে।