রাজধানীতে চুলার আগুনে দগ্ধ চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগের মধ্যেই শাহ আলী থানার ওসি একেএম শাহিন মণ্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শুক্রবার বিকালে শাহিন মণ্ডলকে প্রত্যাহার করে রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ”
এর আগে বুধবার রাতের এ ঘটনায় দগ্ধ বাবুল মাতুব্বর পরদিন সকালে মারা গেলে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে শাহ আলী থানার চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। সন্ধ্যার পর প্রত্যাহার করা ওই চারজনসহ মোট পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শাহ আলী থানাধীন মিরপুরের গুদারা ঘাট এলাকায় চা দোকানি বাবুল তার দোকানে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে পুলিশ বাবুলের দোকানের কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল। এতে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের গায়ে আগুন ধরে যায়। ঘটনার পর পুলিশ অগ্নিদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে অভিযোগ করে তার পরিবারের সদস্যরা। থানা থেকে পরে পরিবারের সদস্যরাই দগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ আলী থানা থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে বাবুল দগ্ধ হন। আর বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন। তবে এ ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টার মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই স্থানীয় কয়েকজন ‘মাদক বিক্রেতাকে’ আসামি করে একটি মামলা নেয় শাহ আলী থানা, যাতে পুলিশের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি।
রাত দেড়টার দিকে করা এ মামলার বাদী নিহত বাবুল মাতুব্বরের মেয়ে রোকসানা আকতার।
তবে বাবুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করতে তারা গিয়েছিলেন। তবে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতেই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে এই মামলা করিয়েছে পুলিশ।
বাবুলের আরেক মেয়ে লাবণী আক্তার বলেছিলেন, “ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযোগের মধ্যে এ ঘটনা প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলসহ দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।
পুলিশের ‘জঘন্য’ আচরণের নিন্দা জানিয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি চেয়ে দাবিও ওঠে সংসদে। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় এ ঘটনা দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে এক মাসের মধ্যে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।