মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগনেতা মাহবুব উল আলম হানিফ। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিশাল সংখ্যা থেকে নাম ধরে ৩০ লাখের হিসাব করা যাবে না। পৃথিবীর অনেক দেশে গণহত্যা হয়েছিল। সেখানে একজন-দুজন হিসাব করে সংখ্যা ঠিক করা হয়নি।
“এটা অনুমানভিত্তিক সংখ্যায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। মানুষের মৃত্যুর ধরণ দেখে, মিছিল দেখেই হয়তো সংখ্যাটাকে ধরা হয়েছে।”
এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর হাতে ইহুদি গণহত্যা, জাপানে পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে গণহত্যা এবং ২০১০ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যায় শহীদের সংখ্যা নিরূপনের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। পাকিস্তানের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়।”
সম্প্রতি রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ‘জরিপ’ করে ‘সঠিক সংখ্যা’ নিরূপণ করার কথা বলেন বিএনপিনেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গত ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় খালেদা বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”
তার ওই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করে খালেদাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর’ অভিযোগে আদালতে মামলাও হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়াস ইন্সটিটিউটে আলোচনা সভায় হানিফ বলেন, “সারা দেশে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল লাশ। নদীতে, পুকুরে ছিল লাশের মিছিল; এখানে-সেখানে ভাসত লাশ। গণহত্যার চিহ্ন সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
“তখন শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করে পাকিস্তান তাদের অপকর্মকে অস্বীকার করেছে। সেই পাকিস্তানের অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য বিএনপি এবং জামায়াত একই সুরে তাদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে।
“পাকিস্তান যেভাবে বলছে, একাত্তর সালে তারা এদেশে গণহত্যা করে নাই। আজকেও বিএনপিও সেই গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাকিস্তানের সেই বক্তব্য সমর্থন করে যাচ্ছে।”