আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনির সদস্যদের সাম্প্রতিক ভূমিকার প্রসংশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক, স্বর্ণ চোরাচালান, মানি লন্ডারিং, নারী পাচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশকে কাজ করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই বাহিনীর কাজের ব্যাপ্তি বাড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পুলিশকে জনগণের সেবক হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে যে নাশকতা শুরু করেছিল, তখন পুলিশ সদস্যরা জীবন বাজি রেখে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে তারা সুদৃঢ় ও সাহসী ভূমিকা রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যার তুলনায় জনবল যথেষ্ট নয় বলেই পুলিশে ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব করতে গিয়ে অনেক সময় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।’
গত বছরের শুরুতে বিএনপি-জামাতের অবরোধের মধ্যে দেশজুড়ে নাশকতা দমনে সাহসী ভূমিকা রাখায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাহিনীর তৎপরতার কারণেই দেশে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে নাই।’
দেশের উন্নয়নের জন্য আইন-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে পুলিশ বাহিনীকে আরও উদ্যোগী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। বাংলাদেশে এই প্রথম একজন নারী পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিলেন। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য এই প্যারেডে অংশ নেন।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০১৫ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০২ জন সদস্যকে পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের পদক পরিয়ে দেন।
গত বছর নানা সহিংসতা মোকাবেলা ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের অপেশাদার আচরণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জননিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এ বাহিনীকে। তবে আরও গণমুখী, সেবামুখী পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে একটি সার্ভিসে রূপান্তরের প্রত্যয়ে এবার পুলিশ সপ্তাহ শুরু হলো।
পুলিশ সপ্তাহের চার দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রথম দিন মঙ্গলবার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, বুধবার পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইজিপির সম্মেলন, বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুষ্ঠিত হবে। শেষ দিন শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে এবারের পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন শেষ হবে।