সোমবার, এপ্রিল ২২, ২০২৪

ঐতিহ্য আর ইতিহাসের খাদিতে আধুনিক ফ্যাশনেবল পোশাক

যা যা মিস করেছেন

বাংলার তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে খাদি শব্দটি।  বিশেষ করে কুমিল্লার খাদির খ্যাতি এখনও বিস্তৃত উপমহাদেশজুড়ে।  মোগল শাসনামলে এ অঞ্চলের খাদি সমাদৃত ছিল উন্নতমানের কাপড় হিসেবে।  একসময় হাতেবোনা একেবারে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বুননশৈলীতে তৈরি হওয়া খাদি কাপড়ের সাথে জড়িয়ে আছে বহু ইতিহাস।  

 

Khadi 1 the mail bd                                                                     কুমিল্লার তাঁতশিল্পে খাদি

স্বদেশী আন্দোলনের সময়টি খাদির জন্য খুবই মর্যাদাপূর্ণ।  খাদির সেই সুদিন আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আধুনিক ফ্যাশনের সাথে যেন সমানভাবে চলতে পারে তার জন্য যুগোপযোগী করে খাদি দিয়ে করা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের জন্য ফ্যাশনেবল সব পোশাক।  এর মধ্যে যেমন রয়েছে পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করা পাঞ্জাবি, শাল, ওড়না, শার্ট ইত্যাদি তেমনি রয়েছে স্কার্ট, ফতুয়া, পালাজ্জো, স্কার্ফ, সালোয়ার কামিজসহ এ সময়ের প্রায় সব ধরনের পোশাক।

সেই সাথে খাদির কাপড়কে আরো উন্নতমানের এবং আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যও চলছে নানা প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ।

খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক খাদির সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কাজ করছেন।  ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (এফডিসিবি)র আয়োজনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল খাদি উৎসব।

Khadi 2 the mail bd                                                                             খাদি উৎসব

বাংলাদেশের ১৮ ও ভারতের ছয়জন ডিজাইনার খাদির পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উৎসবে অংশ নেন।  এমদাদ হক খাদির এই ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যে তাদের প্রচেষ্টার বিষয়ে জানান।  তিনি বলেন, খাদি আমাদের তাঁতশিল্পের নিজস্ব সম্পদ।  এ দেশের মানুষের জীবন ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে।

একটা সময় খাদির কাপড় প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ব্যবহার হতো।  এখনো খাদি কাপড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।  কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম। এই শিল্পের সাথে জড়িত যারা সেই প্রান্তিক তাঁতশিল্পীদের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে খাদির কাপড় আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে খাদির মান উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে।

আমাদের দেশে সাধারণত ৪০-৩০ কাউন্টের খাদি তৈরি হয়।  সেটাকে মিহি ও মসৃণ করার লক্ষ্যে এখন ১০০-১৫০ কাউন্ট খাদি তৈরি করা হচ্ছে। এটাকে আরো মিহি করার চেষ্টা চলেছে।  তবে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সঙ্কট এ ক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা।

খাদিকে সমসাময়িক ফ্যাশনের সাথে সম্পৃক্ত করতে খাদির বুনন ও কালারে আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য।  উইভিংয়ে আনা হচ্ছে নকশার ভেরিয়েশন।  সেই সাথে এখন বেজ রঙ ক্রিম বা অফহোয়াইট থেকে বেরিয়ে রঙেও আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য।  নীল, সবুজ, হলুদ, লাল, কমলা সব রঙেই করা হচ্ছে খাদির কাপড়।  এ ক্ষেত্রে ভেজিটেবল ডাই প্রধানত ব্যবহার করা হচ্ছে।

খাদিকে ফ্যাশনেবল করে তুলতে হলে এর বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগিতা তৈরি করতে হবে।  এই লক্ষ্যে ফ্যাশন ডিজাইনাররা খাদি দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, পালাজ্জো লং কামিজ, শার্ট, ব্যান্টেনা, ওড়না, চাদর, প্রায় সব ধরনের আধুনিক ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরি হচ্ছে।  সেই সাথে খাদি কাপড় দিয়ে শাড়ি করা হচ্ছে।
kadi 3 the mail bd                                                                          ফ্যাশনেবল পোশাক

আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য যথার্থ কাপড় খাদি।  নরম ও আরামদায়ক হওয়ায় গরম ও শীত দুই ঋতুতেই খাদির পোশাক পরা যায়।

আমাদের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।  একদিকে যেমন খাদির পোশাকের প্রতি সবার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি এর মান উন্নয়ন, বুনন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ আরো উন্নত ও সুষ্ঠু করতে হবে।

আর এর জন্য ফ্যাশন ডিজাইনারদের সাথে সাথে সরকারের সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে।  সবার সহযোগিতায় আবার খাদি কাপড় ফিরে পেতে পারে এর সুদিন, হারানো গৌরব।

 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security