মুসল্লির সংখ্যার বিচারে পবিত্র হজব্রতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত হিসেবে পরিচিত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে তাবলিগ জামাত আয়োজিত ইজতেমার প্রথম দফা। কয়েক হাজার বিদেশি মুসল্লি এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই ভারত ও মধ্য প্রাচ্যের।
গত বুধবার রাত থেকেই তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা। শীত উপেক্ষা করে এরই মধ্যে লাখ লাখ মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। গতকাল বৃহস্পতিবারও বাস, ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়ি, লঞ্চসহ নানা ধরনের যানবাহনে করে তাঁরা ময়দানে আসেন। ইজতেমা ময়দানে এলাকা ভিত্তিতে নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন মুসল্লিরা। আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। আগামী রোববার হবে এ দফার আখেরি মোনাজাত।
গতকাল ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে স্থানীয় যাত্রীবাহী বাস, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের ব্যাপক চাপ। প্রায় সব যানবাহনেই রয়েছে মুসল্লিদের ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা গাজীপুরের ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, আশুলিয়া এলাকা হয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে ইজতেমার ময়দানে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার দিবাগত রাতে দেখা যায়, অনেক মুসল্লি যাত্রীবাহী বাস রিজার্ভ করে এসেছেন। টঙ্গী রেল জংশনের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি ট্রেনই ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে। একেকটি ট্রেন স্টেশনে পৌঁছালেই দেখা গেছে, হাজার হাজার মুসল্লি ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে ময়দানের দিকে যাচ্ছেন। মুসল্লিদের কাঁধে ও মাথায় প্রয়োজনীয় মালামালের ব্যাগ, বস্তা বা কাপড়ের পুঁটলি।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইজতেমার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কার্যক্রম। আজ দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। তার আগে হেদায়েতি বয়ান করা হবে।
গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, এবার দুই দফায় ৩২ জেলার জামাতবদ্ধ তাবলিগ সদস্যরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন। এবার প্রথম দফায় ১৬টি জেলার মুসল্লিরা ও দ্বিতীয় দফায় ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এবারের দুই দফায়ই ঢাকা জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। বাকি ৩২ জেলার জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা আগামী বছর ইজতেমায় অংশ নেবেন। তবে জামাতবদ্ধ তাবলিগ সদস্য ছাড়াও সাধারণ মুসল্লিদের ইজতেমায় অংশ নিতে বাধা নেই।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ইসলামি উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের সঙ্গে দেশের মুসল্লিদের যে সম্মিলন ঘটে, তাতে ইসলামকে জানার ও বোঝার পথ সুগম হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মহান আল্লাহর দরবারে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ এবং দেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এ ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ ও মুসলিম উম্মাহর বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশবাসীসহ মুসলিম বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিশ্বের সব মানুষ যেন হিংসা, বিদ্বেষ, সংঘর্ষ, সংঘাত ও হানাহানি থেকে মুক্ত হয়ে সুখী ও আনন্দময় জীবনযাপন করতে পারে।