২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় এক কিশোরী লাশ । সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর মৃতদেহের ছবিটা এখনো সীমান্ত হত্যার প্রতীক।
সেই ঘটনার পর স্লোগানটাই দাঁড়িয়েছিল, ‘ফেলানী নয়, কাঁটাতারে ঝুলছে বাংলাদেশ।’ আরো এক বছর আগ থেকে হিসাবে ফেলানির মতো নির্মমতা শিকার হয়েছেন অন্তত আরো ২৩৬ বাংলাদেশি। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ছয় বছরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে পরিসংখ্যানের সূচক কমেনি। ২০১৫ সালেই সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৪৬ জন।
ফেলানী হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফের জওয়ান অমিয় ঘোষের দুই দফা বিচার হয়েছে বাহিনীর নিজস্ব কোর্টে। দুবারই অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করেন ওই কোর্ট। এখন রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও ভারতের মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট মামলা করেন। সেই মামলার শুনানি এখনো শুরুই হয়নি।
গতকাল যোগাযোগ করা হলে কলকাতার মাসুমের একজন কর্মকর্তা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব, বিএসএফের মহাপরিচালক ও সিবিআইয়ের পরিচালককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের কুড়িগ্রাম অফিস জানায়, ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের আইন সহায়তাকারী ও কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি আব্রাহাম লিংকন বলেন, পাঁচ বছর হয়ে গেল, এখনো ন্যায়বিচার না পেয়ে ফেলানীর বাবা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ফেলানী হত্যা মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করলেও বেঞ্চ পুনর্গঠনের কারণে আবারও পিছিয়ে গেছে বিচারিক কার্যক্রম।
দেশের আদালতের মারপ্যাঁচই বোঝেন না ফেলানীর বাবা-মা। কুড়িগ্রামের পাড়াগায়ের এই সহজ সরল মানুষগুলো ভিনদেশে আদালত পাড়ায় কত চক্কর দিলে মেয়ে হত্যার বিচার পাবেন তা এখন সময়ই ‘বলতে’ পারে।
মানবাধিকার কর্মীরা দাবি তোলেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জন্যই লজ্জাজনক একটি ঘটনা। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উচিত ঘটনাটির সুবিচার করা। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। এটা ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য মোটেও গৌরবের বিষয় নয়।