জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের সিলেবাস শেষ না হতেই পুরো পাঠ্যসূচির ওপর পরীক্ষা নেয়ার আয়োজন চলছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’। সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে ভুক্তভুগি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, ‘সেশনজট দূর করার নামে ক্লাস না করিয়ে, সিলেবাস শেষ না করে, সিলেবাস নামক বস্তাকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে!’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম পরিচালনা করে ২ হাজার ২শ কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৯টির মতো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে যারা এবার তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেবে।
তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই একটু কঠিন। দেখা যায় কলেজে নানা রকম পরীক্ষা প্রায় সবসময় চলতেই থাকে। এ কারণে আমাদের ক্লাস হয়নি বলেলেই চলে। ক্লাসে বড়জোর একটা থেকে দুইটা অধ্যায় শেষ হইছে। আমাদেরকে ৭টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রাইভেট পড়ে চারটি বিষয় শেষ করেছি। আরো তিনটি এখনো বাকি। ২০ তারিখ থেকে পরীক্ষা। এখন কিভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’
ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, তাদের এমন বিষয়ও আছে যেগুলো একেবারেই পড়ানো হয়নি। আর যেগুলো পড়ানো হয়েছে তা বড়জোর দু’একটি অধ্যায়। এমন বিষয় খুঁজেই পাওয়া যায়নি যা শেষ হয়েছে।
সিলেবাস শেষ না করে প্রায় অর্ধেক সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেয়ার ফলে শিক্ষার গুণগতমান কতোটুকু বজায় থাকবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দেখতে কেমন দেখাচ্ছে? ভালো দেখাচ্ছে নাকি খারাপ দেখাচ্ছে? এসব প্রশ্ন আসতো। সেশনজটের কারণে পুরা শিক্ষাপদ্ধতিটিই এখন কোমায়। ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হচ্ছে লাইফ সেভিং ড্রাগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে ফিরে যাবো। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের কোর্স শেষ কতে পারবো। এখন মান আর অ-মান কোনো প্রশ্ন না। সেশনজট থেকে বের হতে এক পারি সার্টিফিকেট হাতে ধরিয়ে দিতে! আমরা সেটা করছি না। আমরা পরীক্ষা নিচ্ছি।’
আগে পরীক্ষার জন্য আন্দোলন হতো উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এখন পরীক্ষা পিছানোর জন্য আন্দোলন হচ্ছে। যেহেতু তারা সময় একটু কম পেয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের আর একটু সময় বাড়িয়ে দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার তারিখকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করছে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার প্রতিটি কলেজের সামনে তারা মানববন্ধন করে। ঢাকা কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ, আনন্দমোহন কলেজসহ নানা ক্যাম্পাসে কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ নানাভাবে ভয়ভীতি ও বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, বিএম কলেজ বরিশাল, নওগাঁ সরকারি কলেজ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ, বরগুনা সরকারি কলেজসহ দেশের অনেক কলেজে মানববন্ধন করার খবর পাওয়া গেছে।
অনেক শিক্ষার্থীই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কারো নেই। ১ম বর্ষ ও ২য় বর্ষে ৬টি করে বিষয়ে যখন ১৮ মাস ও ২২ মাস সময় নিয়েছিল তখন তারা কোথায় ছিলেন? আর এখন ৮টি বিষয়ে মাত্র ৭ মাস, এটা শিক্ষাব্যবস্থা, কোনো খেলার মাঠ না!