শুক্রবার, এপ্রিল ১২, ২০২৪

১০ বছর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ নিলামের উদ্যোগ

যা যা মিস করেছেন

>> বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে আছে ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ
>> সর্বশেষ নিলাম হয় ২০০৮ সালের ২৩ জুলাইয়ে
>> এক হাজার টাকা ভরিতে বৈধ হবে অবৈধ স্বর্ণ
>> এবার স্বর্ণমেলায় অবৈধ স্বর্ণ হবে বৈধ

অবশেষে প্রায় সাড়ে ১০ বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণ নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই স্বর্ণের নিলাম ডাকা হবে। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ভ্যাট, ট্যাক্স নিরূপণ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা হলো- বর্তমানে যাদের কাছে অবৈধ স্বর্ণ রয়েছে তারা ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা সরকারকে দিয়ে তা বৈধ করে নিতে পারবেন। আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে ভরিপ্রতি শুল্ক দিতে হবে দুই হাজার টাকা এবং ভ্যাটের হার রাখা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। ব্যাগেজ রুলের আওতায় শুল্ক আগের মতোই রাখা হয়েছে। একটি স্বর্ণমেলার আয়োজন করে সব অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করা হবে।

বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, এসআরও (প্রজ্ঞাপন) জারির পর যেকোনো দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের নিলাম ডাকা হবে।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। আজকে ভ্যাট ও ট্যাক্স নিরূপণে বৈঠকে বসেছিলাম। সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেলেছি। চলতি মাসেই এ সংক্রান্ত এসআরও জারি করবে এনবিআর।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের নিলাম প্রায় সাড়ে এক দশক ধরে দেয়া হচ্ছে না। এই সময়ে ক্রমেই বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের পরিমাণ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ জমা আছে। নিয়ম অনুসারে, মামলা নিষ্পত্তির পর রক্ষিত স্বর্ণ নিলামে তোলার কথা। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৩ জুলাইয়ের পর নিলামে আর স্বর্ণ বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে একদিকে যেমন এসব স্বর্ণ অব্যবহৃত রয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা এই পরিমাণ স্বর্ণ নিলামে তুললে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে হাজার কোটি টাকা জমা হতো। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়েও করতে হতো না বাড়তি চিন্তা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম অনুসারে স্বর্ণের নিলাম করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু পরে দেখা গেল, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে বাজারদরের চেয়ে অনেক কমমূল্যে স্বর্ণ কিনে নিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেখানে কিছুই করার থাকত না। ফলে বাধ্য হয়েই নিলাম বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ জন্য দায়ী স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তারা নিজেদের মধ্যে এমন একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, যাতে পানির দরে স্বর্ণ কিনে নিতে পারে। এটা হতে পারে নাকি। বাজারদর বলতে একটা বিষয় আছে না।

এদিকে বাংলাদেশে স্বর্ণের বাজারের উন্নয়নের জন্য স্বর্ণ আমদানি ও রফতানিতে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ যুক্তিযুক্ত হবে তা নির্ধারণে বাণিজ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে গত ৫ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এ কমিটির সুপারিশেই ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেন অর্থমন্ত্রী। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিভরি স্বর্ণ আমদানির ওপর এক হাজার টাকা করে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ করা উচিত। আর বর্তমানে যাদের কাছে অবৈধ স্বর্ণ আছে, তাদের কাছ থেকেও প্রতি ভরিতে এক হাজার টাকা করে নিতে হবে।

jagonews

চিঠিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি লিখেন, ‘দেশে কী পরিমাণ স্বর্ণ আছে, তার কোনো হিসাব নেই, হিসাবটি করাও যাবে না।’ তার মতে, এই হিসাব করতে গেলে স্বর্ণের বাজারমূল্য বিবেচনা করে একটি মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এই মূল্য নির্ধারণের ফলে যাদের কাছে স্বর্ণ আছে, তারা রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন। এই বর্ধিত ধনের ওপর অবশ্য জুতসই লেভি (কর) নির্ধারণ করা যায়। তবে লেভি খুব বেশি ধরলে স্বর্ণের ব্যবসায়ের প্রসার হবে না।

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমাদের কোনো স্বর্ণ নীতিমালা নেই। এখানে স্বর্ণ আমদানি করা যায়। কিন্তু গত সাত থেকে আট বছরে এক ফোঁটা (টুকরা) স্বর্ণও আমদানি হয়নি। আমাদের স্বর্ণকাররা খুবই গুণী এবং তারা স্বর্ণালঙ্কারের একটি সীমিত বাজার পরিচালনা করেন। এসব স্বর্ণই আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের স্বর্ণ এবং সেগুলোকে প্রায়ই নতুন করে বানানো হয়।’

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security