ইউনানি চিকিৎসার সাময়িক সনদ নিয়ে ১২ বছর ধরে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিজানুর রহমান (৫০) নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। এমনকি নিজের নামের পাশে হৃদেরাগ বিশেষজ্ঞ ও এমফিল ডিগ্রির তকমা লাগাতেও দ্বিধা করেননি। খোদ রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে বসে এমন প্রতারণা করে আসছিলেন মিজান। সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ার পর তাঁকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই ভয়াবহতার সময়ে এমন অনেক ভুয়া চিকিৎসকের তথ্য পাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাব সূত্র বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া চিকিৎসকরা প্রথমে কোনো না কোনো ওষুধের দোকানে কাজ নেন। কিংবা কোনো প্রকৃত চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করার মাধ্যমে ওষুধ ও রোগীর ব্যবস্থাপত্র সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নেন। ওই ধারণায় ভর করে টাকার বিনিময়ে কেনা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়েই সাজিয়ে বসেন চেম্বার। সাধারণত কোনো ফার্মেসি বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁরা চেম্বার খুলে বসেন। কোনো কোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভুয়া ডাক্তার রেখে রোগ পরীক্ষার ব্যবসা করে এবং দালালের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে। এসব ডাক্তার সাধারণত ২০-৩০টি ওষুধের নাম মুখস্থ করে রাখেন।
করোনার সময়ে সারা দেশেই এমন ভুয়া চিকিৎসক ধরা পড়ার তথ্য রয়েছে। গত জুলাই মাসে রাজধানীর যমুনা জেনারেল হাসপাতাল, সেবিকা হাসপাতাল, মতিঝিল ইসলামী হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় র্যাব অভিযান চালায়। গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ডেমরার হাজীনগরে এসএইচএস হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকে র্যাবের অভিযানে ভুয়া চিকিৎসকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের জেল-জরিমানার পাশাপাশি হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ভুয়া চিকিৎসক সুমন প্রকৃতপক্ষে এইচএসসি পাস। প্যারামেডিক্যাল কোর্স করে ডাক্তার পরিচয়ে তিন বছর ধরে ডেমরায় হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি।
এর আগে গত ১৪ জুন মোহাম্মদপুরে মুক্তিযুদ্ধ টাওয়ারে যমুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে লাভলু মিয়া নামে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় হাসপাতালের মালিক ও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনা এক দালালকে।
গত ২১ মার্চ করোনাভাইরাসের টিকা বিক্রির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের নান্দাইলের খামারগাঁও গ্রামে শাহীন নামে এক প্রতারক ও তার সহযোগীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও তার সহযোগীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন খাগড়াছড়িতে করোনা চিকিৎসার নামে জার্মান হোমিও হলের ‘চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া সমীরণ চৌধুরীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৮ মার্চ নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মাইকিং করে প্রতিষেধক বিক্রির সময় দুই যুবককে আটক করে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ভুয়া সনদে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়াই চলছে এই অপচিকিৎসা। সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছি আমরা। বেরিয়ে আসছে একের পর এক ভুয়া চিকিৎসকের তথ্য।’
বঙ্গবন্ধু চিকিৎসক পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে অনেক অভিযোগ আসে। অনেক ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এই প্রতারণা রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) তৎপর হতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলে তাদের তথ্য পেলে প্রশাসনকে জানানো উচিত। কারো বিষয়ে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেল্প লাইনে (১৬২৬৩) ফোন করাটা সবার দায়িত্ব।