প্রিয় শিক্ষার্থীরা ভালোবাসা নিও।
পৃথিবীর এই সংকটময় মূহুর্তে তোমরা কেমন আছো তা জানতে চাইবো না। যারা সুস্থ আছো, তারা খুব একটা ভালো নেই। কারণ দুশ্চিন্তা আর হতাশা ক্রমেই গ্রাস করে চলেছে। আমরা এমন বিপর্যয় দেখবো তা কল্পনাও করতে পারিনি। প্রকৃতি তার নিজের মতো করেই পরিবর্তিত হয়। সে হিসেবটাও বড় কঠিন। তোমরা ভালো থাকলে আমাদের মন ভরে যায়। নতুন পৃথিবী তোমাদের দিকেই চেয়ে থাকবে। তোমাদের নিয়ে নতুন করে সাজবে এ ধরণী।
আমি জানি, তোমাদের মন ভালো নেই। কতোদিন এভাবে ঘরে বসে থাকা যায়! তোমরা এখন আমাদের মতো ঘরে বসে স্মৃতিচারণ করছো। তোমরা ভেঙে পড়লে আমরা কাদের আশায় বাঁচবো?! তোমরাই তো আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করবে। তোমরা ঘরে বসে হতাশ না হয়ে স্বপ্নগুলোকে সাজিয়ে নাও। সময় কাটাও নিজেদের ভালোলাগা দিয়ে। এখন তোমরা বাবা মা কে সবচেয়ে বেশি সময় কাছে পাচ্ছো। তোমাদের বাবা মাও তোমাদের আগের তুলনায় বেশি সময় দিতে পারছেন। এটাও বর্তমান যান্ত্রিক সমাজে কম প্রাপ্তি নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে বাবা মা। শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও বাবা মা। এজন্যই তোমরা হতাশ না হয়ে এই সময়টিকে কাজে লাগাও।
অনেকদিন হলো তোমাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে। পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। তোমাদের হতাশার এটিও অন্যতম একটি কারণ। যে সমস্যা সারা পৃথিবীজুড়ে, সে সমস্যার জন্য এতো হতাশ হয়ে লাভ কি? যা হয় সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। এমনতো নয়, তুমি একাই স্কুলে যেতে পারছো না। আমাদের সুদিন ফিরে আসবে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তোমরা আবার ক্লাসে যাবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। স্কুল মাঠে খেলাধুলা করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা তো এখন বাস্তবতার মুখোমুখি। একবার ভেবে দেখো, এই কঠিন বাস্তবতা থেকে কি আমরা কিছু শিক্ষা নিচ্ছি না? অনেক শিক্ষা আমরা প্রতিদিন গ্রহণ করছি। সচেতনতার শিক্ষা, নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা।
আসো ঘরে বসে এই সময়টা কিভাবে কাটানো যেতে পারে সে ব্যাপারে একটু বলি। প্রতিটি মানুষই কোন না কোন প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। উপযুক্ত সুযোগের অভাবে সবাই প্রতিভা বিকশিত করতে পারে না। এই সময়টা ঘরে বসে তোমাদের প্রতিভার চর্চা করো। যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করো, তারা এমন একটি ছবি আঁঁকাও যেন সেটা ইতিহাস হয়ে থাকে। যারা লিখতে পছন্দ করো তারা এমন কিছু লেখ, যেন লেখাটি পড়লে প্রাণ ভরে যায়। যারা সাইন্স প্রজেক্ট তৈরি করো, তারা ভাবতে থাকো বাড়ির পরিত্যাক্ত জিনিস কিভাবে কাজে লাগানো যায়। নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি করো। মোটকথা নিজেদের ব্যস্ত রাখো তোমাদের সখের কাজগুলোর মাধ্যমে।
এই সময়টা তোমাদের পছন্দমতো গল্পের বই পড়তে পারো। প্রতিযোগিতামূলক লেখাপড়া তোমাদের মধ্য থেকে গল্পের বই পড়ার সংস্কৃতি কেড়ে নিয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই আমাদের বাস্তববাদী হতে শেখায়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক সিনেমা আছে। সেগুলো দেখতে পারো। ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই সিনেমাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। ইতিহাস না জানলে ইতিহাস সৃষ্টি করাও যায় না। ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইংরেজি সিনেমাও দেখতে পারো। কিছু কিছু সিনেমাতে ইংরেজিতে সাবটাইটেল দেয়া থাকে, সেগুলো তালিকায় রাখতে পারো।
এই সময়ে তোমাদের হাতের লেখাটা সুন্দর করে নিতে পারো। তোমাদের কাছে যার হাতের লেখাটি ভালো লাগে, তাকে অনুকরণ করো। দেখবে কয়েকদিনের মধ্যেই তোমার হাতের লেখা প্রায় তার মতো হয়ে গিয়েছে। তোমরা যারা ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করো, বাসার বারান্দায় একটি ক্রিকেট বল ব্যাগের মধ্যে সুন্দর করে বেঁঁধে দড়ি দিয়ে টাঙিয়ে দাও। ব্যাট হাতে নিয়ে শুরু করে দাও প্রাকটিস।
নিজের ভাবনা থেকে কিছু করার চেষ্টা করো। দেখবে সত্যিই তোমার ভালো সময় কাটছে।
এই চিঠি তোমাদের বাবা মা পড়ার পর আমার প্রতি একটু অখুশি হতে পারেন। কারণ আমি এখনও তোমাদের পাঠ্যবই পড়ার ব্যাপারে কোন পরামর্শ দেইনি। আমি তোমাদের এ ব্যাপারে কোন পরামর্শ দিতে চাই না। কারণ আমি জানি, পড়াশোনা নিয়ে তোমার এমনিতেই অনেক কিছু ভাবছো। তাই প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যবই পড়বে এটাই আমার বিশ্বাস। নিজের প্রতি আস্থা রেখে পাঠ্যবই পড়বে। দেখবে তুমি অনেক কিছুর সমাধান নিজেই করতে পারছো। তোমাদের প্রজন্ম শিক্ষকদের প্রতি দারুণভাবে নির্ভরশীল। এর জন্য দায়ী আমরাই। তোমাদের মগজকোষে আমরা শিক্ষকরাই ঢুকিয়ে দিয়েছি, আমরা ছাড়া তোমাদের পড়াশোনা হবেনা। এই ধারণা ভুল। একজন শিক্ষক তোমাকে পথ দেখাতে পারেন, কিন্তু সেই পথ দিয়ে হাটতে হবে তোমাকেই। নিজেকে অসহায় না ভেবে পড়াশোনা করো। সমস্যা হলে, বুঝতে না পারলে ঘরে বসেই সমাধান করার অনেক মাধ্যম আছে। প্রযুক্তির ব্যাবহার করো। যা আমার চেয়ে তোমরাই অনেক ভালো জানো। অথবা বড় ভাইবোন, মা বাবার পরামর্শ নাও। দেখবে সব কিছুই সহজভাবে হয়ে যাচ্ছে।
জীবনকে জটিলতার দিকে ঠেলে দিও না। সহজে যা করা যায় সেটাই করবে। সবসময় হাসিমুখে থাকবে। গলা উচিয়ে বলবে ‘আমি ভালো আছি’।
শুভকামনা তোমাদের প্রতি।
লেখক : মোস্তাফিজুর রহমান শামীম, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, ভেড়ামারা কলেজ, কুষ্টিয়া।