বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

জনপ্রিয় পার্সিয়ান বা পারস্য বিড়ালের ইতিহাস

যা যা মিস করেছেন

বাংলাদেশের সকল ধরনের বিড়ালের মধ্যে পার্সিয়ান বিড়ালের মত এতটা প্রচলিত ও আদরণীয় আর কোনোটি নয়। এই প্রজাতির বিড়াল বিচিত্র রংয়ের ও ধরনের নকশাদার লোমবিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এর একটি সুদীর্ঘ মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে একটি এ প্রজাতির বিড়ালের মালিক হওয়া যে কেবল নানাভাবে উপকারি তা ই নয় বরং তা একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক। আমাদের সাতটি বিভাগীয় অঞ্চলের গ্রাম ও শহর উভয় ধরনের বাসযোগ্য এলাকাতেই এই প্রজাতির বিড়াল প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায় এবং আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিড়াল হিসেবে এটিকে অনলাইনে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে বিক্রি হতে দেখা যায়।

এ বিড়ালের আদি উৎস কোথায় তা যদিও অনিশ্চিত তবুও এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের সাম্প্রতিক উৎস হলো ইরান বা পারস্য। তুরস্কে অবশ্য ইতোমধ্যেই এর সমগোত্রীয় প্রজাতির দেখা পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ লোমবিশিষ্ট বিড়ালগুলো একদা তুলনামূলকভাবে বিরল ছিল। পারস্য থেকে এই বিড়ালগুলো যে শুধু বাংলাদেশেই এসেছ তা নয় বরং এগুলো আফগানিস্তান, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশেও গিয়েছে।

    কিন্তু খুব পাকাপোক্ত প্রমাণ এর পিছনে পাওয়া যায় না। তবে ইউরোপে এই প্রজাতির বিড়াল আসে পিয়োত্রো দেল্লা ভালে নামের পর্যটকের হাত ধরে। ১৬২০ সাল নাগাদ পিয়েত্রো এশিয়া, আফ্রিকার কিছু এলাকা এবং পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে ইতালিতে এসে পৌঁছন। তিনিই তখন সঙ্গে করে এই প্রজাতির বিড়ালটি নিয়ে আসেন। তাই মনে করা হয়, ইরান না হলেও আফ্রিকা, এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের কোনও এলাকাই এই বিড়ালের আদি বাসভূমি। ইউরোপে এসে পৌঁছনোর পরেই রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে পড়ে এই বিড়াল। ক্রমশ নানা মানুষের পোষ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। ইউরোপ থেকে পৌঁছে যায় আমেরিকাতেও।

     বিড়াল নিয়ে এখন প্রচুর প্রদর্শনী হয়। কিন্তু এর রেওয়াজ খুব পুরনো নয়। বরং কুকুরের প্রদর্শনীর অনেক পরে শুরু হয়েছে বিড়ালের প্রদর্শনী। পিয়েত্রোর সূত্রে ইউরোপে এসে পৌঁছনো পার্সিয়ান বিড়াল নিয়ে প্রথম বার বিড়ালের প্রদর্শনী হয় লন্ডন শহরে। সেটাও ইউরোপে এসে পৌঁছনোর প্রায় ২৫০ বছর পরে। সবিড়ালের সেই প্রদর্শনীতে শুধুমাত্র পার্সিয়ান বিড়ালই ছিল প্রধান আকর্ষণ। এই প্রজাতি ছাড়াও সেখানে সায়ামিজ, স্কটিস ওয়াইল্ড ক্যাট জাতের বিড়াল ছিল। এই প্রদর্শনীর পরে ইউরোপ জুড়ে পার্সিয়ান বিড়ালের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকে।

     বিংশ শতকের গোড়ার দিকে এই পার্সিয়ান বিড়াল আমেরিকায় এসে পৌঁছয়। মার্জার-প্রেমীরা ইউরোপ থেকে এই প্রজাতির বিড়াল নিয়ে যান আমেরিকায়। পৌঁছেই রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে পড়ে এটি। এখন আমেরিকায় যত পোষ্য বিড়াল রয়েছে, তার মধ্যে সিংহভাগই পার্সিয়ান বিড়াল।।

      বিড়ালের জগতে পার্সিয়ান এতটাই জনপ্রিয় যে বহু নামজাদা মানুষও পোষ্য হিসেবে তাদের গ্রহণ করতে পিছপা হননি। এর মধ্যে প্রথমেই আসবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলর নাম। গোটা জীবনে প্রায় ৬০টি বিড়াল পুষেছিলেন তিনি। যার মধ্যে অধিকাংশই পার্সিয়ান প্রজাতির। তবে তাদের মধ্যে আবার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল একজন। বিশালাকার সেই পার্সিয়ান বিড়ালের নাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল রেখেছিলেন মিস্টার বিসমার্ক। মেরিলিন মনরোর পোষ্য পার্সিয়ান বিড়ালও রীতিমতো জনপ্রিয়। তার নাম ছিল মিতসোউ। শোনা যায়, আমেরিকার িবখ্যাত লেখক রেমন্ড চ্যান্ডলার নাকি নিজের সমস্ত উপন্যাস প্রথমে পড়ে শোনাতেন তাঁর পোষ্য বিড়ালকেই। সেই পার্সিয়ান বিড়ালটির নাম ছিল টাকি।

ভারতেও বহু সেলিব্রিটি পার্সিয়ান বিড়ালের মালিক। সেই তালিকায় রয়েছেন আলিয়া ভাট থেকে জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের মতো অনেকেই। আলিয়ার পোষ্য দুই পার্সিয়ান বিড়ালের নাম শিবা এবং পিকা। জ্যাকলিনের পোষ্যর নাম মিউ মিউ। শিল্পা শেঠি নিজে একজন প্রাণীঅধিকার রক্ষা কর্মী। এবং তিনি নিজেও পার্সিয়ান বিড়ালের মালিক। মনীষা কৈরালাও পার্সিয়ান বিড়ালের মালিক।

একটি পার্সিয়ান বিড়াল পুষতে হলে একে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত এর যত্ন নিতে হবে। তাতে করে এর অক্ষিগোলক সুরক্ষিত থাকবে এবং লোমগুলো নেতিয়ে পড়বে না। বিড়ালকে গোসল করানোটাও বেশ উপকারি। বিড়ালের লোম ছেঁটে ছোট করে রাখলে এর যত্ন নেয়াটা সহজ হয়। আর একটি দরকারি কাজ হলো বিড়ালের চোখ থেকে জমাট ধূলোবালি পরিষ্কার করতে এর চোখ ধুয়ে দেয়া।

বাড়িতে পোষার জন্য পার্সিয়ান বিড়াল একটি আনন্দদায়ক পোষাপ্রাণী হতে পারে এবং পাশাপাশি সেটি বাড়ির ইঁদুর নিধনের কাজেও লাগতে পারে। আপনি যদি আপনার বিড়ালটির প্রজনন ঘটাতে চান তবে আপনি অনলাইনে খুঁজে দেখতে পারেন এবং এমন কারো সাক্ষাত পেতে পারেন যিনি আপনাকে বিড়াল প্রজননে সাহায্য করতে পারেন, বিশেষ ক্ষেত্রে তা অর্থের বিনিময়ে হতে পারে। আপনি যদি একেবারেই সদ্যজাত কোনো পার্সিয়ান বিড়াল পুষতে চান তবে অনলাইনে মিষ্টি চেহারার এমন কিছু বিড়ালছানা পাবেন যেটিকে আপনার সন্তানেরা একনজরেই পছন্দ করে ফেলবে। এমনকি অনলাইন মার্কেটগুলোতে আপনি বিড়ালের খাবার, বিড়ালের খেলনা, যত্নআত্তির সরঞ্জাম এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি বেশ সস্তায় কিনতে পারবেন।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বজুড়ে বিড়ালপ্রেমীদের জীবনে ও হৃদয়কোঠরে পার্সিয়ান বিড়াল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এর বহুল পরিচিত মিষ্টি স্বভাব এবং আকর্ষণীয় রং ও নকশাদার গঠনের কারণে গৃহপালিত বিড়াল হিসেবে এটি মানুষের প্রিয় পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হয়েছে এবং এরা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই নতুন একটি স্থানীয় প্রজাতির জন্ম দিয়েছে। নতুন প্রজাতির বিড়াল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এদেরকে বার্মিজ এবং টার্কিস প্রজাতির মত অন্যান্য প্রজাতির সাথে সংকর করা হয়েছে। বিভিন্ন বিড়াল প্রদশর্নীতে এরা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে এবং পৃথিবীজুড়ে বিড়ালপ্রেমীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security