শুক্রবার, এপ্রিল ১২, ২০২৪

করোনা পরবর্তী অর্থনেতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কা 

যা যা মিস করেছেন

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে এখন স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্হবিরতা বিরাজ করছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ঔষুধ, ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিলম্বের কারণে সবচেয়ে ফলপ্রসূ পন্থা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণকে।

উন্নত দেশগুলো সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে শক্তভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারছে।তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো তা পারছে না তাদের অর্থনেতিক দৈন্যদশার কারণে। যেসকল দেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল সেসকল দেশে পূর্ণ লকডাউন ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সারাবিশ্বে লকডাউনের জন্য অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি যেমন কমে যাচ্ছে হতাশাজনকভাবে তেমনি মানুষ হতে যাচ্ছে বেকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে ১৫ মিলিয়নের অধিক মানুষ বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে,  করোনার কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে দুই বিলিয়নের অধিক মানুষ চাকুরী হারাবে। এখন প্রশ্ন উঠছে,  তাহলে কি করোনা পরবর্তী বিশ্ব দুর্ভিক্ষ ও বৈশ্বিক মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সন্দেহ মোটে অমূলক নয়। বিশ্ব খাদ্য সংস্হা  এ ব্যাপারে একমত পোষণ করছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্হার মতে যে সকল দেশে দুর্বল চিকিৎসাব্যবস্থা, দুর্বল সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা, দারিদ্র্য আছে তাদের অবস্হা হবে ভয়াবহ। বাসায় থাকার কারণে হয়ত করোনার সংক্রমণ কমবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তবে, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে চড়ামূল্য দিতে হবে দরিদ্র জনগণকে। কেননা,  উন্নয়নশীল দেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল। এই লকডাউন অবস্হা দুর্ভিক্ষের মত নতুন আতঙ্কের কারণ হতে পারে এই দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য। অর্থনেতিক স্হবিরতা কিভাবে দুর্ভিক্ষের কারণ হয় তা আমরা ২০১৪ সালে সিয়েরা লিওনে ইবোলা সংক্রমণকালে দেখেছি।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার বই “দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যে” দেখিয়েছেন দরিদ্র ও অসহায় মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হয় নানা কারণে।  খাদ্য সামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতা কারণেও দুর্ভিক্ষ হয়। পণ্য বন্টন ব্যবস্হার কারণে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে, বাজার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মূখ্য ভূমিকায় অবর্তীণ হয়। লকডাউনের কারণে, যেমন দরিদ্র মানুষের আয় কমবে, পণ্যের দাম বাড়বে, তেমনিভাবে উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। করোনাকালে আমরা উন্নতদেশগুলোর খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থারও অসহায়ত্ব দেখতে পাচ্ছি। যদি দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয় তাহলে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এজন্য বলা যায় যে, দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন অবস্হা আবার ভয়ের কারণ হতে পারে। তখন মানুষ করোনায় না মরে ক্ষুধায় মারা যাবে। লকডাউনে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে মুটে, মজুররা। এই উভয়মুখী সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোকে দুর্বল অঅর্থনীতির দেশগুলোর দিকে সহায়তার হাত প্রসারিত করতে হবে।

ভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে ৮০টির বেশি দেশ আইএমএফের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। ইকুয়েডর, জাম্বিয়ার মত দেশগুলো তাদের দাতা দেশগুলোর সহায়তা চাইছে।  কিন্তু, অনেক উন্নত দেশ এখন সহায়তায় অনীহা দেখাচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বিশ্বের ১০কোটি নিরন্ন মানুষের খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। তারা বলছে, সহায়তা বন্ধ হলে বিশ্বের প্রায় তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যাবে। এই আসন্ন সংকট থেকে বাচাঁর জন্য আমাদের বন্টন ব্যবস্থাকে পুনঃগঠিত করতে হবে, সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে সহায়তার ব্যবস্থা তা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে।

তবে, আশা থাকবে মানুষ আরো বেশি মানবিক দৃষ্টি থেকে পরবর্তী বিশ্বকে গড়ে তুলবে এবং অর্থনেতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তুলে দুর্ভিক্ষের এই সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করবে।

প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ডক্টর মালিকা কলেজ,ঢাকা

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security